মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে গেল রেশমা নাহার রত্নার এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন। সাইকেল চালানো অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন পর্বতারোহী রত্না।
পাহাড় ট্র্যা কিং ভালোবাসতেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রত্না। এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। অন্য সব ছুটির দিনের মতোই শুক্রবার সকালে হাতিরঝিলে বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়ানোর পর মিরপুরের বাসায় সাইকেল চালিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন রত্না।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ সুমন দেশ রূপান্তরকে জানান, “জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোড দিয়ে সাইক্লিং করার সময় একটি প্রাইভেটকার তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে তিনি মাথায় বাজেভাবে আঘাত পান। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।”
রত্নার বন্ধুরা জানান, এভারেস্ট জয় করার অদম্য ইচ্ছে ছিল তার। সেই স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা।
খান মোহাম্মদ রিফাত বিল্লাহ ফেইসবুকে লিখেছেন, “পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজনীন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এভারেস্ট জয় করার থেকে ঢাকা শহরের যেকোনো রাস্তা পার হওয়া বেশি সাহসের কাজ কারণ তা বেশি বিপজ্জনক।’ এই কথাটি যেন নির্মমভাবে সত্য হলো, পর্বতারোহী, আমাদের সহপাঠী রেশমা রত্নার ক্ষেত্রে। পৃথিবীর দুর্গম পর্বত জয় করে ফিরে আসলেও ঢাকা শহরের বিপজ্জনক রাস্তা তার জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে।”
মেসবাহ সুমন দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, রত্নার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসেছেন। ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। পরে নড়াইলে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে।
সংসদ ভবন এলাকার সিসি টিভির ফুটেজ দেখার অনুরোধ জানিয়ে মেসবাহ সুমন বলেন, “এটি যেহেতু ভিআইপি এলাকা, নিশ্চয় সিসি ক্যামেরা আছে। আমরা আশা করব, পুলিশ সিসি ক্যামেরা দেখে বের করবেন, দুর্ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে। রত্না কি অসাবধান হয়ে সাইকেল চালাচ্ছিলেন, নাকি বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে অন্য কেউ তাকে চাপা দিয়েছে। সাড়ে ৯টায় রত্না বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলোর ইশকুলের জুম ক্লাসে উপস্থিত থাকার কথা ছিল, আগের দিনও আমাদের সঙ্গে ছিল। তার এমন মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।”
২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেওক্রাডংয়ের চূড়া স্পর্শ করার মাধ্যমে শুরু হয় রত্নার পাহাড়ে অভিযান। এ পর্বতারোহী ২০১৯ সালে ২৪ আগস্ট ভারতের লাদাখে অবস্থিত স্টক কাঙ্গরি পর্বত (৬১৫৩ মিটার) এবং ৩০ আগস্ট কাং ইয়াতসে-২ পর্বত (৬২৫০ মিটার) সফলভাবে আরোহণ করেন। এর পর ২০১৮ সালে আফ্রিকার উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কিলিমানজারো ও দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত মাউন্ট কেনিয়া অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। পর্বতারোহী ও সাইক্লিস্ট উদ্যমী এই তরুণী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরি, আলোর ইশকুলের কর্মসূচি, পাঠচক্রসহ নানা উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন।
Leave a Reply