রাজধানীর যানজট দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে করোনার মধ্যেও বিভিন্ন সড়কে যানজট হচ্ছে। এ যানজটের অন্যতম কারণ ধীরগতির রিকশা। জরিপের তথ্য মতে রাজধানীতে বৈধ-অবৈধ মিলে ১০ লাখের মতো রিকশা রয়েছে। যানজট কমাতে বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞরা রিকশা নিয়ন্ত্রণের কথা বলে আসছেন। সে আলোকে এতদিন রিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ ছিল। গত বছর মূল সড়কে রিকশা বন্ধ করা নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন হয়। এবার রিকশাকে বৈধতা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর রাজধানীতে আবারো রিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। শুধু প্যাডেলচালিত রিকশাকে এ লাইসেন্স দেয়া হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বৈধতা দেয়া হবে না বলে ডিএসসিসির মেয়র জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে সিটি করপোরেশন চলতি অর্থবছরে ২৪ কোটি টাকা আয়ের নির্ধারণ করেছে।
যানজট নিরসনে ১৯৮৬ সালের পর থেকে রাজধানীতে রিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। তবে সে সময় নিবন্ধিত থাকা রিকশার লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়ন করার সুযোগ দিত ঢাকার দুই সিটি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, পুরো রাজধানীতে ৮০ হাজার ৪৭৩টি রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি এলাকায় ৫২ হাজার ৭৫৩টি এবং উত্তর সিটিতে ২৬ হাজার ৭২০টি রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের (বুয়েট) এক জরিপ অনুযায়ী রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এই হিসাবে নয় লাখেরও বেশি রিকশা অবৈধভাবে রাজধানীতে চলাচল করছে। বিভিন্ন এলাকায় রীতিমতো গ্যারেজ করে অবৈধ রিকশার জমজমাট বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এ জন্য তাদের এক শ্রেণীর নামসর্বস্ব সমিতি ও সংগঠনকে চাঁদা দিতে হতো। এসব সমিতি এক একটি নম্বর প্লেটের বিপরীতে রিকশা প্রতি তিন মাস পরপর আদায় করে থাকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর লাইসেন্সের কথা বলে নেয়া হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। কিন্তু সিটি করপোরেশনকে কখনোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। রাজধানীর ছোট রাস্তায় এভাবে বিপুল সংখ্যক রিকশা চলার কারণে মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই যানজট লেগে থাকে। এ কারণে গত বছর মূল সড়ক থেকে রিকশা উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুই মেয়র। কিন্তু তখন রিকশা চালকরা রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। কয়েকদিনের টানা আন্দোলনের ফলে পিছু হঠতে বাধ্য হয় সিটি করপোরেশন। এরপর আগের মতোই রাজধানীর মূল সড়ক থেকে অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ রিকশা।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রিকশা বৈধতা দেয়ার পরিকল্পনা নেন। তারই আলোকে অতি শিগগিরই লাইসেন্স দেয়া শুরু করতে চান তিনি। এজন্য চলতি অর্থ বছরের বাজেটে রিকশার লাইসেন্স থেকে ২৪ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, সিটি করপোরেশন লাইসেন্স না দিলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে লাখ লাখ রিকশা চলছে নগরীতে। এতে সিটি করপোরেশন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ জন্য আমরা রিকশাকে বৈধতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা বন্ধ করে দেয়া হবে।
রিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন চালক-মালিকরা। জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ১৬ জুলাই আমরা দুই মেয়রকে চিঠি দিয়ে রিকশার লাইসেন্স দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। এখন দক্ষিণের মেয়র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা ইতিবাচক। এতে নির্দিষ্টসংখ্যক রিকশাকে বৈধতা দিলে নগরীর যানজট কমে যাবে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে সরকারের সাথে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছিল। তখন ঢাকায় নতুন করে ৩৫ হাজার রিকশা ও ৮ হাজার ভ্যানের লাইসেন্সের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরে সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। রাজধানীর উত্তর সিটিতে দেড় লাখ এবং দক্ষিণ সিটিতে আড়াই লাখের মতো রিকশা রয়েছে জানিয়ে ইনসুর আলী বলেন, শুধু রিকশার লাইসেন্স দিলেই হবে না, এ ব্যাপারে একটি মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রিকশা নগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোন সড়কে কতগুলো রিকশা চলবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। সেক্ষেত্রে তাদের বৈধ লাইসেন্স দিলে সিটি করপোরেশনের কাছে তাদের ডাটাবেজ থাকবে। তখন কোন রাস্তায় কতটি রিকশা চলবে সেটিও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। তবে নগরীর যানজট কমাতে শুধু রিকশা ম্যানেজমেন্ট করলেই হবে না; প্রাইভেট কার ম্যানেজমেন্টও থাকতে হবে। আরবান মোবিলিটি প্লান করতে হবে। না হলে শুধু রিকশা নিয়ে পরিকল্পনা করে নগরীর যানজট কমানো যাবে না। সূত্র : নয়াদিগন্ত।
Leave a Reply