বাইসাইকেলের চাকা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়ার কথা নতুন নয়। তবে স্বল্প খরচে উৎপন্ন বিদ্যুৎ থেকে বৈদ্যুতিক লাইট, ফ্যান, টিভি এমনকি পানি তোলার পাম্প চালানো সত্যিই বিস্ময়ের। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রানা মজুমদার সাইকেলের চাকার গতিশক্তির মাধ্যমে চুম্বক ক্ষেত্র থেকে এমনি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার দাবি করেছেন।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সাওড়াতলির ছেলে রানা মজুমদার। বাবা সেলিম মজুমদার ও মা জফুরা বেগমের আট ছেলেমেয়ের মধ্যে ষষ্ঠ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। করোনাভাইরাসের কারণে চার মাসের অধিক সময় বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধের সময়টা বসে না থেকে সাইকেলের এক চাকা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার কাজে নেমে পড়েন এই শিক্ষার্থী।
রানা জানান, সাইকেলের চাকা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার যন্ত্র অনেক আগে উদ্ভাবিত হয়েছে। তবে সেগুলো থেকে আমার যন্ত্রটি ভিন্ন। এখানে কম খরচে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। উদ্ভাবিত সাইকেল ডায়নামো থেকে শতভাগ আউটপুট পাওয়া যাবে, যা ব্যবহার করে লাইট, ফ্যান, টিভি এমনকি পানি উত্তোলনের পাম্প মেশিন চালানো সম্ভব। তবে এ যন্ত্রের সক্ষমতা নির্ভর করবে ব্যাটারির শক্তির ওপর। আমরা যদি বেশি ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহার করি তাহলে বেশি সময় শক্তি জোগান দেবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। লোডশেডিং হলে সাইকেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের মাধ্যমে একটি পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে দাবি এই তরুণ বিজ্ঞানীর। এ ছাড়া যেসব এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেখানে এই সাইকেল ডায়নামো ব্যবহার করা যাবে বলেও জানান তিনি।
ছোটবেলা থেকেই তড়িৎ বা বৈদ্যুতিক বিষয়গুলোর প্রতি দুর্বল ছিলেন রানা মজুমদার। তিনি জানান, ছোটবেলায় যখন মোটর দিয়ে পাখা বানাতাম তখন একটা ভাবনা মাথায় আসত। ‘কারেন্ট দিলে মোটর ঘোরে, কিন্তু আমরা যদি মোটর ঘোরাই তা হলে কি কারেন্ট তৈরি হবে?’ সেই চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করতে পারলাম সাইকেল ডায়নামো উদ্ভাবন করে।
তবে রানা মজুমদারের পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আপাতত বড় পরিসরে এ যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বড় পরিসরে সাইকেল ডায়নামো উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন বলে জানান তিনি। যা পরে জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে দাবি তার। রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীর ডায়নামো আবিস্কারের কথা শুনে খুব আনন্দিত। বিভাগ থেকে আমরা সব সময় তাকে সহায়তা করব।
উপাচার্য অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী বলেন, বন্ধের সময় অনেক শিক্ষার্থী যেখানে বসে থেকে দিন পার করছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী সাইকেল ডায়নামো উদ্ভাবন করেছে। তা আমাদের জন্য গর্বের। শিক্ষার্থীর আর্থিক সমস্যা বিবেচনা করে ডায়নামো বড় আকারে উৎপাদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব সময় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হয়। আর এমন ভালো উদ্যোগে এই শিক্ষার্থী সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়কে পাশে পাবে। সূত্র : সমকাল।
Leave a Reply