বিশ্বের সেরা ২২টি জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮৫টি কনটেইনার জাহাজ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন করছে। ওই জাহাজ কম্পানিগুলোই দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে ২০১৯ সালে ২৯ লাখ একক কনটেইনার পরিবহন করেছে। এতে আয় করছে হাজার কোটি টাকা। এই ব্যবসা ধরতে বিশ্বসেরা কম্পানিগুলোর মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ব্যবসা নিজেদের কবজায় আনতে চলছে রীতিমতো ‘যুদ্ধ’। এই প্রতিযোগিতায় এখনো শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে ডেনমার্কের মায়ের্সক গ্রুপের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান মায়ের্সক লাইন ও সিল্যান্ড (সাবেক এমসিসি)। মায়ের্সক গ্রুপ বিশ্বের ১২১টি দেশের ৩৪৩টি সমুদ্রবন্দরে তাদের সেবা বিস্তৃত করেছে, যা এখন বিশ্বের বৃহত্তম শিপিং লাইনস।
জাহাজ পরিচালনাকারী কম্পানির হিসাবে, ১০ বছর ধরে এই কম্পানি বাংলাদেশে কনটেইনার পরিবহনের শীর্ষে রয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে পণ্য পরিবহনেরও শীর্ষস্থান অটুট রেখেছে মায়ের্সক লাইন ও সিল্যান্ড। এর মধ্যে আমদানিতে শীর্ষে আছে সিল্যান্ড প্রায় ২০ শতাংশ এবং রপ্তানিতে শীর্ষে আছে মায়ের্সক লাইন ১৬ শতাংশ। মায়ের্কস গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান মায়ের্সক লাইন, সিল্যান্ড এবং সাফমেরিন মিলিয়ে মোট পণ্য পরিবহনের ২৪ শতাংশ আমদানি ও রপ্তানিতে গড়ে ২৩ শতাংশ পণ্য পরিবহন করছে। ওই সময়ের মধ্যে শীর্ষ তালিকায় আমদানিতে দ্বিতীয় স্থানে আছে চীনভিত্তিক কসকো শিপিং প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ, তৃতীয় স্থানে আছে সুইস-ইতালিয়ান মেডিটেরানিয়ান শিপিং কম্পানি (এমএসসি) প্রায় ৮ শতাংশ, চতুর্থ স্থানে আছে হংকংভিত্তিক ওরিয়েন্ট ওভারসিস কনটেইনার লাইন (ওওসিএল) এবং পঞ্চম স্থানে আছে সিঙ্গাপুর-জাপানভিত্তিক ওশান নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস (ওয়ান)। আবার তালিকা অনুযায়ী রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে আছে ওয়ান লাইন সাড়ে ১১ শতাংশ, তৃতীয় স্থানে আছে জার্মানভিত্তিক হ্যাপাগ-লয়েড পৌনে ১১ শতাংশ, চতুর্থ স্থানে সিল্যান্ড পৌনে ১০ শতাংশ এবং পঞ্চম স্থানে ফ্রান্সের সিএমএ ৯ শতাংশ। জানতে চাইলে মায়ের্সক লাইন বাংলাদেশের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ফিডার অপারেটর ফিডারটেকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেদ সারোয়ার বলছেন, মায়ের্সক লাইন নিজেদের জাহাজ ও কনটেইনার লাইন দিয়ে বিশ্বজুড়েই একটি বিশাল নেটওয়ার্ক-কানেকটিভিটি তৈরি করেছে। তাদের বিজনেস ভলিউম এত বড়, অনেকগুলো ছোট লাইন নিজেদের মধ্যে মার্জ বা একীভূত হয়ে গেছে। এ জন্য ছোট ছোট লাইন মিলে বড় অ্যালায়েন্স তৈরি করে শিপিং বাণিজ্যে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি বড় জাহাজ বা মাদার ভেসেল ভিড়তে পারে না। সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও চীনের বন্দরগুলোতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বড় জাহাজে করে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে পৌঁছে যায়। এই কাজটি করে থাকে বিদেশি জাহাজের ফিডার অপারেটর।
গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘কোন শিপিং লাইনে পণ্য আসবে, তা আমাদের পছন্দের ওপর নির্ভর করে না। বিদেশি ক্রেতা তার সুবিধা এবং পছন্দ অনুযায়ী শিপিং লাইন ঠিক করে রাখেন। সেই লাইনেই পণ্য জাহাজীকরণ হয়ে আমাদের কাছে আসে। বিদেশি বড় ক্রেতারা ভালো এবং স্বনামধন্য কম্পানি বাছাই করলে পণ্য আসা-যাওয়া ঠিক থাকে। পণ্য উৎপাদনে আমাদের বাড়তি বেগ পেতে হয় না।’
Leave a Reply