চার কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রেলের রাজশাহী জোনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, বর্তমানে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রমজান আলী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুবকর সিদ্দিক বাদী হয়ে গতকাল রোববার কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে পৃথক এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অনুসন্ধানে রমজান আলী ও তার স্ত্রী আগা দিলরুবা পারভীন ইলোরার নামে চার কোটি ২৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। চাকরিকালীন রমজান আলী ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ নিজের ও স্ত্রীর নামে রেখেছেন। রমজানের স্ত্রী মূলত একজন গৃহিণী। তার নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা অস্বাভাবিক।
রমজানের বিরুদ্ধে করা এজাহারে বলা হয়, ১৯৮৯ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে তার অর্জিত দুই কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৬ টাকার সম্পদের মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত দুই কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকা গোপন করেছেন। একইভাবে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে গত বছরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত দিলরুবার নামে অর্জিত দুই কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৬ টাকার সম্পদের মধ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে এক কোটি ৮৫ লাখ আট হাজার ১৮০ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এই দম্পতির বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দুটি করা হয়।
রমজানের নামে যত সম্পদ : রমজান আলী ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এইচ ব্লকের ৬ নম্বর রোডে ৪৯৭ নম্বর প্লটে তিন কাঠা জমিতে তার আটতলা বাড়ি রয়েছে। এই বাড়ির প্রতি ফ্লোরের আয়তন দেড় হাজার বর্গফুট। বাড়িটির বর্তমান মূল্য এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়া রমজানের নামে ব্যক্তিগত গাড়ি (গ-২৯-৩৪৮২), নগদ টাকাসহ মোট দুই কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৬ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদের বিপরীতে তার বেতন-ভাতা, কৃষিকাজে আয়, জমি বিক্রিসহ ৬৮ লাখ ২৭ হাজার ৮৯২ টাকার বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে। পারিবারিক ব্যয় বাদে তার নিট আয় ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫০ টাকা। বাকি দুই কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদের উৎস দেখাতে পারেননি তিনি।
সূত্র জানায়, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম কে এম ইমরুল কায়েশের আদেশে রমজানের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাড়িটি ক্রোক করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, রমজানের নামে পাবনার সাঁথিয়া ও সরিষাফরিদ মৌজায় প্রচুর জমি রয়েছে। নামে-বেনামে ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকে নগদ টাকা জমা রয়েছে।
স্ত্রী দিলরুবার নামে সম্পদ : এজাহারে বলা হয়, রমজান আলী কৌশলে স্ত্রী দিলরুবা পারভীন ইলোরার নামে সম্পদ করেছেন। ইলোরার নামে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে ৩৩০৭ নম্বর প্লটে তিন কাঠা জমি রয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ টাকা। বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে ১০৮০ প্লটে আরও তিন কাঠা জমি রয়েছে তার নামে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ২৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ইলোরার নামে জামালপুরের সিংজানি মৌজায় ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০৭ টাকা মূল্যের চার শতাংশ জমি, একই মৌজায় আরও ৬ শতাংশ জমিতে পাঁচতলা আবাসিক ভবন রয়েছে। এটির বর্তমান বাজারমূল্য ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পাবনার সরিষাফরিদ মৌজায় ২১ শতাংশ জমি রয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নামে-বেনামে আরও সম্পদ রয়েছে ইলোরার নামে।
Leave a Reply