একনেক বৈঠকে মঙ্গলবার কিছু অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মহাসড়কে টোল আদায় প্রসঙ্গ। দাউদকান্দি-গোয়ালমারী-শ্রীরায়েরচর (কুমিল্লা)-মতলব উত্তর (ছেঙ্গারচর) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প নিয়ে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্মাণ খরচের কথা বিবেচনায় রেখে সামান্য হলেও মহাসড়কে টোল আদায় করা যেতে পারে। এটা কিভাবে আদায় করা যায়-সে বিষয়ে পরিকল্পনা করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সব সড়ক টোলমুক্ত হবে এটা ঠিক না। রাস্তাঘাট মেরামত ও রক্ষাণাবেক্ষনের খরচ যাতে টোলের টাকা থেকে আসে সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে টোল আদায় প্রক্রিয়ায় যাতে সড়কে যানজট সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে মঙ্গলবার এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্নিষ্ট সচিবরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের একনেক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে বৈঠকে যোগ দেন।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয়ের সমালোচনা আছে দীর্ঘদিন ধরে। অপচয় রোধে বিভিন্ন সময় অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরও প্রকল্পের কেনাকাটায় অপচয়ের মাধ্যমে দুর্নীতি এবং অপ্রয়োজনীয় গাড়ি কেনা ও স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা বন্ধ হয়নি। প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এরকম দুটি বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব নিজ হাতে কেটে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীতে প্রকল্পের জন্য এরকম ডাকবাংলো নির্মাণ না করা এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
‘বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্প এবং ‘খুলনা সড়ক জোনের আওতাধীন মহাসড়কে বিদ্যমান সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো কংক্রিট সেতু বা বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প নির্মাণ পরিদর্শনের জন্য দুটি বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অপ্রয়োজনীয় বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব নিজ হাতে কেটে দেওয়ায় প্রায় ছয় কোটি টাকা সাশ্রয় হলো।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী ওই বাংলোর বিষয়ে বলেছেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সারাদেশে অনেক বাংলো রয়েছে। কাজেই কোনো প্রকল্পের আওতায় নতুন করে আর বাংলো নির্মাণের প্রয়োজন নেই। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তারা মনে করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তাদের অস্থায়ী অবস্থানের প্রয়োজন নেই। দিনে গিয়ে পরিদর্শন শেষে কর্মস্থলে ফেরা সম্ভব। ব্রিটিশ আমলে বাংলো বানানো হতো। কারণ তখন যোগাযোগ এত উন্নত ছিল না।
বন্যা এবং নদীভাঙন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাঙনের মুখে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় মডেলিং করতে হবে, যাতে এসব নদীভাঙনের আগে রক্ষা করা যায়। বন্যা প্রতিরোধে খাল খননেরও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বাঁধ রক্ষায় স্লুইসগেট নির্মাণ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
একনেকে মঙ্গলবার ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ছয়টি নতুন, বাকিটা সংশোধিত প্রকল্প। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ, দাউদকান্দি-গোয়ালমারী-শ্রীরায়েরচর মতলব উত্তর (ছেঙ্গারচর) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্তকরণ, খুলনা সড়ক জোনের আওতাধীন মহাসড়কে বিদ্যমান সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো কংক্রিট সেতু/বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণ। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চঘাট থেকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা রক্ষা প্রকল্প, কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ইমার্জেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প।
Leave a Reply