ইলিয়াস কাঞ্চন। বরেণ্য অভিনেতা ও সংগঠক। অভিনয় ক্যারিয়ারে চার দশকেরও বেশি সময় পার করেছেন তিনি। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একুশে পদকসহ নানা সম্মাননা।
চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা কেমন মনে হয়?
এখন ভালো ছবি নির্মিত হচ্ছে; তরুণ নির্মাতারাও বেশ ভালো ভালো কাজ করছেন। তারপরও ভালো ছবির সংখ্যা কিন্তু বাড়েনি। যারা এ সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে দর্শকের প্রশংসা পেয়েছেন, তাদের উচিত বিরতি না দিয়ে নিয়মিত কাজ করা। তাহলেই আমাদের চলচ্চিত্র প্রাণ ফিরে পাবে। এর পাশাপাশি সিনেমা হল বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। কারণ এটাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ জন্য চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে সিনেমা হল বাড়াতে হবে। করোনার কারণে এ রুগ্ণ শিল্পে আরও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আশা করছি তা দুঃসময় দ্রুতই কেটে যাবে। করোনা-পরবর্তী পৃথিবীতে আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। পুরোনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে কাজ করলে চলচ্চিত্র আরও পিছিয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, আবার সুদিন আসবে। আমরা যারা পুরোনো হয়ে গেছি, নতুন প্রজন্মের কাছে আবারও সবাই অভিনয়ে ফিরব। অভিনয় করতে করতে চলে যেতে চাই।
যে স্বপ্ন নিয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা কতটা পূরণ হয়েছে?
১৯৯৩ সালের এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারাকে হারিয়েছি। তার মৃত্যুকে ঘিরে সেদিন সারাদেশে আলোড়ন উঠেছিল যেমন, তেমনি সেই ঘটনায় পাল্টে যায় আমার জীবন। সেই থেকে নিরাপদ সড়কের সংগ্রাম করে চলেছি। সেই আন্দোলন অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছি। বলা যেতে পারে, আমার জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে একটি সড়ক দূর্ঘটনা। নিসচা সংগঠনের নাম এখন জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা সরকারের কাছে কয়েকটি প্রস্তাব রেখেছিলাম। তার মধ্যে দিবস পালনের বিষয়টিও ছিল, যাতে বছরের নির্দিষ্ট একটি দিনে সর্বস্তরের মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি আলাদা করে ভাবতে হবে। কিন্তু দিবস পালন, ফোর লেন, ডিভাইডার দেওয়া, একমুখী চলাচল, হাইওয়ে পুলিশ ছাড়া অন্য বিষয়গুলো তেমন গুরুত্ব পায়নি। আমার প্রস্তাবিত দাবিগুলো সব পূরণ হলেই এতদিনের স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূরণ হতো।
আপনার কাছে জীবনের সংজ্ঞা কী?
জীবন মূল্যবান। এই এক জীবনকে কাজে লাগাতে হবে। এখানে সুখ যেমন থাকে, তেমন থাকে দুঃখও। থাকে না-পাওয়ার বেদনা। সব নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়। আর সে কারণেই জীবন উপভোগের।
জীবনের প্রাপ্তি -অপ্রাপ্তি নিয়ে কখনও ভাবেন?
পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে সেভাবে কখনও ভাবিনি। তবে আমার মাঝে মধ্যেই মনে হয় যখন আমি অভিনয় পুরোপুরি অনুভব করতে শুরু করলাম, তখন থেকেই চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হলাম। এটাই আমার অতৃপ্তি মনে হয়। এর বাইরে এক জীবনে অনেক পেয়েছি। ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। দাদা, নানা হয়েছি। এখন তাদের ভালোবাসা নিয়ে জীবনের বাকি পথটা পাড়ি দিতে চাই।
Leave a Reply