শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটের লৌহজং চ্যানেলটি নাব্য সংকটে বন্ধ হয়ে গেলে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিকল্প একটি চ্যানেল তৈরি করা হয়। নাব্য সংকটে সেই চ্যানেলটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার এই রুটে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন পদ্মার দুই পাড়ের যাত্রীরা। উভয় পাড়ে সহস্রাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। যাত্রীরা ভিড় করছেন লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার ঘাটে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, গতকাল ভোরে কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে ২৬টি যানবাহন ও পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে দুটি কে-টাইপ ফেরি শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা করে। ফেরি দুটি পদ্মা সেতুর চ্যানেলে প্রবেশ করলে ডুবোচরে আটকা পড়ে। সংবাদ পেয়ে উদ্ধারকারী জাহাজ দিয়ে ফেরি দুটি শিমুলিয়া ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দূর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, নৌ চ্যানেলে যে পরিমাণ পানির গভীরতা প্রয়োজন, কোথাও কোথাও তার চেয়ে কম গভীরতা থাকায় রো রো ও টানা ফেরিগুলোর তলদেশ আটকে যাচ্ছে। কে-টাইপ ফেরি ক্যামেলিয়া, কিশোরী, কাকলী, কলমীলতা ও ছোট ফেরি ফরিদপুর রুট দিয়ে চালু রাখা হলেও পদ্মার তীব্র স্রোতের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। যেহেতু পদ্মা সেতুর চায়না চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলাচল করছে, তাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সেতুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আড়াই মাস ধরে নাব্য সংকট থাকায় ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় পদ্মা পারাপারে। এক সপ্তাহ ধরে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় নৈশকোচের যাত্রীদের পড়তে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। ঘাটে বসে থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাত কাটাতে হচ্ছে গাড়িতেই। গত এক সপ্তাহে মাত্র দুটি ট্রাক পার হতে পেরেছে। ঘাটে বসে থাকায় ট্রাকের অনেক পণ্যে পচন ধরেছে। কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। যশোরের অভয়নগর থেকে আসা পেঁয়াজভর্তি ট্রাকচালক রঞ্জিত পোদ্দার বলেন, পাঁচ দিন ধরে সিরিয়াল ধরে পদ্মাপাড়ে বসে আছি। আজকে (বৃহস্পতিবার) ফেরিতে গাড়ি ওঠানোর পর শুনি ফেরি চলাচল বন্ধ। আমার মতো শত শত ট্রাকচালক এখন যাবে কোথায়?
গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর উপজেলার তাহমিনা আক্তার জানান, তার মা স্ট্রোকের রোগী। গতকাল ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে দেখেন ফেরি চলাচল বন্ধ। বাধ্য হয়ে এখন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী ঘাটের ম্যানেজার আব্দুল আলিম জানান, ফেরি চলাচল বন্ধের পর থেকে গাড়িচালকদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি। এর পরেও যদি কেউ ঘাটে বসে থাকে আমাদের কিছুই করার নেই।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন অফিসার আহম্মদ আলী বলেন, চ্যানেলের ড্রেজিং কাজ অব্যাহত রয়েছে। আমরা একটি বিকল্প চ্যানেলের সন্ধানে রয়েছি।
Leave a Reply