দেশের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নতুন বিধিমালা আসছে। এই বিধিমালার মাধ্যমে একদিকে যেমন এই শিল্পের পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এই বিধিমালা না মানলে এটি অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। যে অপরাধের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা জরিমানা আর ২ বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিধিমালায় জোন ঘোষণা থেকে শুরু করে ইয়ার্ড স্থাপন, নতুন ইয়ার্ড স্থাপন, অনাপত্তি সনদ, সৈকতায়ন, বিভাজন বা কাটিং, জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাসিলিটি প্ল্যান, আন্তর্জাতিক মান সংরক্ষণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ড, বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা, বোর্ডের কার্যাবলি বা ক্ষমতা, পরিদর্শন, পরিবেশের সুরক্ষা ও শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তা, জাহাজ বিভাজনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা, সেফটি এজেন্সি নিয়োগ, সেফটি অডিট, শ্রমিক-কর্মচারীদের রেজিস্ট্রেশন ও মজুরি, শ্রমিক-কর্মচারীদের বীমা, অপরাধ, দন্ড ও বিচারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকছে।
বিধিমালায় জোন সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখার জন্য উপযুক্ত এলাকাকে জোন হিসেবে ঘোষণা করবে। আর তা সরকারি গেজেটের মাধ্যমেই হবে। প্রয়োজনে ওই জোন এলাকা সম্প্রসারণ করা হবে। জোন এলাকা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ইয়ার্ডের ভ‚মিতে সরকার একক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠার সুবিধার জন্য জোন এলাকার খাসজমি দীর্ঘমেয়াদে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুক‚লে বরাদ্দ প্রদান করা যাবে।
ইয়ার্ডের ক্ষেত্রে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো জোনে ইয়ার্ড স্থাপন করা যাবে না। ইয়ার্ড স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। আর আবেদনের সঙ্গে বেশ কিছু কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে ইয়ার্ড ফি ও নবায়ন ফি পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো ইয়ার্ড পরিচালনা করলে সেই ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে কোনো ইয়ার্ডে আমদানি করা কিংবা স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যাবে। তবে বোর্ডের অনাপত্তি সনদ নিতে হবে। অনাপত্তি সনদ পাওয়ার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। সৈকতায়নের বিষয়ে বলা হয়েছে, ইয়ার্ড মালিক বা তার প্রতিনিধি বহির্নোঙরে পরিদর্শন শেষ হওয়ার পর বোর্ডের কাছে আবেদন করবে। জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য যেসব সুবিধা থাকা প্রয়োজন তা অবহিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছেন বিপজ্জনক ও অবিপজ্জনক বর্জ্য সাময়িক মজুদ করার জন্য গুদাম, শ্রমিকদের উপযুক্ত বাসস্থান, আগুন নির্বাপণের ব্যবস্থাসহ আরও অন্যান্য বিষয়।
জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে একটি পরিকল্পনা বোর্ডের থেকে অনুমোদন নিতে হবে। আন্তর্জাতিক মান সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশনের শর্ত প্রতিপালন করতে হবে। আর তা পালনের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চেয়ারম্যান করে ১২ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হবে। বোর্ডের কার্যক্রম হবে বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যাবলির সার্বিক তত্ত¡াবধান করা। এর পাশাপাশি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ পরিকল্পনা অনুমোদন করা। ফ্যাসিলিটি প্ল্যান অনুমোদন দেওয়া, শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিষয়ে তদারকি করা ও প্রয়োজন অনুসারে নির্দেশনা দেওয়া।
বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, ইয়ার্ডের মালিকদের সব শ্রমিক-কর্মচারীদের নামে জীবন বীমা করা বাধ্যতামূলক। ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করলে এককালীন ৫ লাখ আর গুরুতর আহত বা অঙ্গহানি হলে এককালীন ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার মালিককে বহন করতে হবে।
এই বিধিমালা না মানলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া ইয়ার্ড স্থাপন করে তা হলে তার জন্য সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড আর কমপক্ষে ১০ লাখ ও সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। অনাপত্তি সনদ ছাড়া কেউ কোনো জাহাজ আমদানি বা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করলে এখানেও একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ছাড়পত্র ছাড়া জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ, জাল সার্টিফিকেট দাখিল, জোনের বাইরে ইয়ার্ড স্থাপন, বোর্ডের আদেশ লঙ্ঘন করলে এ ক্ষেত্রে একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এসব শাস্তি জামিনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে মৃত শ্রমিকের স্ত্রীকে ব্রিটিশ জাহাজ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি
Leave a Reply