দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৫৬৮ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুপরিসর বিমান ওঠানামার জন্য রানওয়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে ৪৫২ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ।
দ্বিতীয় প্রকল্পের ২১১৬ কোটি টাকায় নির্মিত হবে সব সুবিধাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক টার্মিনাল। টেন্ডার ও চুক্তি প্রক্রিয়া শেষে বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপকে (বিইউসিজি) এ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। খুব শিগগির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ কাজ ২০২৩ সালের মধ্যেই শেষ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
জানা যায়, ২০০২ সালে ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ২০০৬ সালে টার্মিনাল সম্প্রসারণ করা হলেও সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক বিমান আসা-যাওয়া শুরু হয়। এখান থেকে হজ ফ্লাইট পাঠানো শুরু হয় ২০০৭ সালে। রিফুয়েলিং স্টেশন চালু হয় ২০১২ সালে। ২০১৫ সালে সিলেট-দুবাই ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে সিলেট-মধ্যপ্রাচ্য ফ্লাইট নিয়মিত চলাচল শুরু হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে যেসব সুবিধা থাকা দরকার তার অনেক কিছুই ছিল না। যাত্রী ও ফুয়েল নিয়ে সুপরিসর বিমান উড্ডয়নের জন্য কমপক্ষে ৮৯ পেভমেন্ট ক্লাসিফিকেশন নম্বরের (পিসিএন) শক্তিশালী রানওয়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তা ছিল ৭০ পিসিএনের। যে কারণে সিলেটে লন্ডন থেকে আগত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ল্যান্ড করতে পারলেও চার শতাধিক আসনের সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ উড়োজাহাজ প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও পূর্ণ আসনের যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করতে পারত না। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বিশ্বের সব গন্তব্যেই যেন সিলেট থেকে সরাসরি বিমান চলাচল করতে পারে এমন দাবি করে আসছে সিলেটের প্রবাসীরা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৭ সালেই এ বিমানবন্দরের রানওয়ে শক্তিশালীকরণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এরপর এ বছরের ১৯ এপ্রিল এ বিমানবন্দরের একটি অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন, একটি কার্গো ভবন, আধুনিক এটিসি টাওয়ার, ট্যাক্সিওয়ে ও অ্যাপ্রোন এবং আধুনিক ফায়ার স্টেশন স্থাপনের জন্য ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৬ লাখ থেকে ২০ লাখে উন্নীত হবে বলে প্রত্যাশা করেন এ বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ।
এ প্রকল্পের আওতায় নতুন বোর্ডিং ব্রিজ, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, ফ্লাইট ইনফরমেশন ডিসপ্লে-সিস্টেমসহ অন্য অত্যাধুনিক টার্মিনাল বিল্ডিং সম্পর্কিত সব ধরনের যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রথম প্রকল্পে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বেবিচকের সঙ্গে চুক্তি সই করে ৬ দিন পর ২৪ ডিসেম্বরই যৌথভাবে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান কোম্পানি হাল্লা ও বাংলাদেশের মীর আক্তার গ্রুপ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আরেফিন সিদ্দিকী যুগান্তরকে বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। এছাড়া সিলেটের প্রবাসীদের প্রাণের দাবি মেটাতে এখানে কাজটি শেষ করতে তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রকল্পটি দেখাশোনার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিয়োজিত করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০ জন প্রকৌশলী ও অধ্যাপককে। যারা সার্বক্ষণিক কাজের মান তদারকি করছে। এদের একজন বুয়েটের সিনিয়র রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার জীল হাফিজ বলেন, তারা টেন্ডার অনুযায়ী কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করছেন। কোনোভাবেই ঠিকাদারের গাফিলতির সুযোগ নেই।
কারণ তারা সার্বক্ষণিক মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন। বুয়েটের রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মোতালেব বলেন, এখন পর্যন্ত ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি তারা খুঁজে পাননি। রানওয়ের কাজ অন্য কাজের মতো সার্বক্ষণিক করা যায় না, বিমান চলাচল স্বাভাবিক রেখে শুধু রাতে কাজ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী যুগান্তরকে বলেন, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন। করোনা মহামারী উপেক্ষা করে চীনা প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রাথমিক কাজ করে যাচ্ছে। খুব শিগগির দৃশ্যমান কাজ শুরু হবে। নির্দিষ্ট সময় ২ বছর ৯ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে সোয়া কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ
Leave a Reply