পদ্মা নদীতে নাব্য সংকটের কারণে দ্বিতীয় দিনের মতো শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। তবে আগামীকাল রোববার থেকে বিকল্প পথে ফেরি চলাচল শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কয়েক দিন ধরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। ফলে ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ছোট ট্রলার, লঞ্চ ও স্পিডবোটে চলাচল করছেন যাত্রীরা।
এদিকে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ফেরি বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে। কিন্তু এখানেও নাব্য সংকটের কারণে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন হওয়ায় ঘাট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে চলছে এ অবস্থা। মাদারীপুর, শিবচর, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি ও লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতার পাঠানো খবর : গতকাল বিকেল ৩টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার নৌপুলিশের পার্কিং ইয়ার্ডে থাকা যানবাহনের অধিকাংশই চলে গেছে। শতাধিক যানবাহন ঘাটের পার্কিং ইয়ার্ডে ঢোকানো হয়েছে। এখনও ছোট-বড় আড়াই শতাধিক যানবাহন ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। অপেক্ষায় থাকা যানবাহনগুলোর অধিকাংশ রড, এলপি গ্যাস, চাল, তেল, আটা, চিনি ও লবণভর্তি। ঢাকা থেকে মাদারীপুরের টেকেরহাটগামী টিসিবির চিনিভর্তি কাভার্ডভ্যানের চালক আমির হোসেন জানান, তিনি গত ২৮ আগস্ট ঘাটে পৌঁছেছেন। পরের দিন রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দিনে সীমিত আকারে তিন-চারটি ফেরিতে যানবাহন পারাপার করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘কবে ফেরি চলাচল শুরু হবে, কবে নদী পার হতে পারবো আল্লাহ জানেন।’
ট্রাকচালক মো. ফরিদ বলেন, ‘বরগুনা যাবো। ঘাটে এসেছি গত ২৭ আগস্ট। প্রতিদিন হেলপারসহ খাওয়াদাওয়ার খরচ হয় কমপক্ষে ৬০০ টাকা। আট দিনের থাকা-খাওয়ায় টাকাপয়সা সব শেষ। বাড়ি থেকেও আনতে পারছি না।’
পদ্মায় নাব্য সংকট, তীব্র স্রোত ও পদ্মা সেতুর নিরাপত্তাজনিত কারণে ২৯ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফেরি চলাচল শুরু হলে মাঝ পদ্মায় দুটি ফেরি আটকে যায়। এরপর দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বর্তমানে ৮৭টি লঞ্চ ও দেড় শতাধিক স্পিডবোট পদ্মায় চলাচল করছে।
শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) হিলাল উদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দুই শতাধিকের মতো মালবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। বৃহস্পতিবার ফেরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই রাতেই অর্ধেকের বেশি ট্রাক ঘাট থেকে চলে গেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ট্রাকসহ দেড় শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। নতুন করে যেসব পরিবহন ঘাটে আসার চেষ্টা করছে, সেগুলো পাটুরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়াত আহম্মেদ বলেন, নৌপথ সচল করতে বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডব্লিউটিএ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ চ্যানেল সচল করে দিলেই ফেরি চলবে।
চ্যানেল খননের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, পালের চর দিয়ে নৌপথ মার্কিং করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার থেকে ওই পথ দিয়ে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল করা যাবে। তবে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে খনন কাজ শেষ হতে আরও তিন দিন লাগবে। আমাদের অংশ থেকে এক হাজার ৬০০ ফুট দূরে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষও খনন কাজ করবে। খনন শেষ হলে এ পথ দিয়ে ফেরি চলতে পারবে।
এদিকে, কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এতে ঘাট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ নৌরুটে ১৮টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারপার করা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে আসা বরিশালগামী দিগন্ত বাসের চালক সুমন হোসেন জানান, গতকাল সকাল ১০টার দিকে তিনি ঘাটে আসেন। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ফেরিতে উঠতে পারেননি।
রাজবাড়ীগামী ট্রাকচালক গোপাল শেখ জানান, তিনি গত সোমবার রাত ১১টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। কিন্তু শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফেরির টিকিট পাননি। এ রকম শত শত বাস ও ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় পড়ে রয়েছে।
Leave a Reply