বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের (বাপক) চাকরির প্রবিধানমালা ১৯৯০-এর বিধান লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদে ২৬ কর্মকর্তাসহ ৬ শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত বাণিজ্যিক ইউনিট ১৩টি হলেও নিজস্ব মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই ৩৩টি ইউনিট স্থাপন করে সৃষ্টি করা হয়েছে ৩৩৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ। এ ছাড়াও সার্ভিস রুলস ১৯৮০ এবং প্রবিধানমালা অনুযায়ী বাপকে শূন্যপদের বিপরীতে ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ এবং ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান লঙ্ঘন করে ১০০ শতাংশ পদেই পদোন্নতি দেওয়া হয়।
পদ না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি দিয়ে প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এমন অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এসব নিয়োগ দেন করপোরেশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী। ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পাঁচ সদস্যের কমিটি।
নিয়োগ বিধিসম্মতভাবে হয়নি উল্লেখ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও মতামত দেয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর পর্যটন মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) প্রায় ৬ মাস আগে চিঠি দিলেও দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুদক কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা জানাতে পারেননি কর্মকর্তারা।
এনাম কমিটি ও সরকারি অর্গানোগ্রামে অনুমোদিত পদের বাইরে বাপকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যবস্থাপক (পূর্ত) পদে ৩ জন, উপব্যবস্থাপক পদে ১১ জন, উপব্যবস্থাপক (হিসাব) পদে ৭ জন, নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে ২ জনসহ মোট ২৬ জনকে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ২১ জনকেই নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী। ২০০৫ সালে একজন ব্যবস্থাপক (পূর্ত)ও একজন উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নিয়োগ দিয়েছেন ড. মাহফুজুল হক। ২০১৮ সালের এক উপব্যবস্থাপক (জনসংযোগ ও বিক্রয় উন্নয়ন) নিয়োগ দেন আখতারুজ জামান খান কবির। ২০১০ সালে একজন উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও ২০১২ সালে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত বিভাগ) নিয়োগ দেন মো. হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার।
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ১৯৯০ লঙ্ঘন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়া এবং কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই ব্যাপকভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ভারসাম্যহীন করা হয়েছে। বাপকে কর্মরত ৪৬২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে বিভিন্ন পদে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯৪ জনকে। বাকি সবাইকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সার্ভিস রুলস ১৯৮০ এবং কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ১৯৯০-এর বিধিবহির্ভূতভাবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে পরবর্তী সময়ে স্থায়ী করে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশ অনুযায়ী করপোরেশনের অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলোর (পাবলিক এন্টারপ্রাইজ) লোকবল কাঠামোর পরিবর্তন/পরিবর্ধন/সংশোধনে সংশ্লিষ্ট করপোরেশনের পরিচালকমন্ডলীকে অনুমোদনের ক্ষমতা দেওয়া হলেও একই আদেশের ১ (ক) (৪) অনুচ্ছেদে করপোরেশনের লোকবল কাঠামোর পরিবর্তনের প্রস্তাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সম্মতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ২৪-০৬-১৯৮৭ তারিখের অবি (প্র-১)/বিবিধ-১/৮৭-৫৪নং অফিস আদেশেও একই নির্দেশনা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পদ সৃজনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ব্যতীত লোকবল কাঠামোতে পরিবর্তন করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের জন্য জনপ্রশাসন সচিবের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়, ১৯৭২ সালে বাপক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন পদ ছিল ১ হাজার ৩৭২টি। ১৯৮৩ সালে এনাম কমিটি ৬৫৯ পদবিশিষ্ট জনবল ও ১৩টি পাবলিক এন্টারপ্রাইজ সৃজন করে। পরবর্তী সময়ে সরকার ৩২টি পদ সৃজন করায় জনবল দাঁড়ায় ৬৯১টি। কিন্তু বর্তমানে কাজ করছে এর দ্বিগুণ জনবল ও বোর্ড কর্তৃক সৃজন করা হয় ৩৩টি ইউনিট। বাপকের বোর্ড পাবলিক এন্টারপ্রাইজ সৃজন, বিপুলসংখ্যক পদ সৃষ্টি ও বিধিবহির্ভূতভাবে জনবল নিয়োগের অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, বাপকের তথ্যমতে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত মহাব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক, উপব্যবস্থাপক, নির্বাহী কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী, সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপক, প্রধান পরিবেশক, পাচক, সহকারী পাচক, পরিবেশক, গাড়িচালক, বেল ম্যান, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, রুম বয়, এমএলএসএস, নিরাপত্তা প্রহরী, মালী, সুইপার, ক্লিনার ইত্যাদি পদে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ করা হয়েছে ৯৪ জনকে। বাকি সবাইকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সার্ভিস রুলস ১৯৮০ এবং কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ১৯৯০-এর বিধিবহির্ভূতভাবে ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করে পরবর্তী সময়ে স্থায়ী করা হয়। এ বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনের প্রতিনিধির মন্তব্য চাওয়া হলে বাপকের প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মারকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাপকের জনবল হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষমতা বোর্ডের এখতিয়ার। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয় না এবং সে মতে সব কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মারকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থা/করপোরেশনের অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় মালিকানার প্রতিষ্ঠানসমূহের লোকবল কাঠামোর পরিবর্তন/পরিবর্ধন/সংশোধন সংশ্লিষ্ট স্বশাসিত সংস্থা/করপোরেশনের পরিচালকমন্ডলী (বোর্ড) অনুমোদন করতে পারবে। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে কেবল উৎপাদন ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানসাপেক্ষে এবং সরকারের কর্মসংস্থানের সার্বিক নীতির আলোকে এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান (পাবলিক এন্টারপ্রাইজ) স্থাপন ও জনবল সৃজন সরকারের এখতিয়ারাধীন। স্বশাসিত সংস্থা/করপোরেশন/অধিদপ্তর/পরিদপ্তরে লোকবল কাঠামোর পরিবর্তনের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে। বাপক এ বিধান উপেক্ষা করেছে।
পদোন্নতিসংক্রান্ত অনিয়ম : বাপকের বোর্ডসভা পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যখন খুশি তখন পদোন্নতি দিয়েছে। এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ আছে বলে তদন্ত প্রতিবেদেন উল্লেখ করা হয়। তার মধ্যে একটি হলো, ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদোন্নতি কমিটির সভায় মো. জাকির হোসেনকে ব্যবস্থাপক থেকে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফিডার পদে তিন বছরের চাকরির শর্ত প্রবিধানমালায় থাকলেও তা লঙ্ঘন করে ভিন্ন পদের চাকরিকে ফিডার পদের চাকরি হিসেবে গণ্য করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৪০৪তম বোর্ডসভাসহ বিভিন্ন বোর্ডসভায় বিধির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ফিডার পদের বাইরের ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এসব অনিয়ম হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
প্রশাসনিক অনিয়ম :বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন অর্ডার, ১৯৭২-এর ১৭ (২) ধারায় বলা হয়েছে, করপোরেশন প্রত্যেক আর্থিক বছর শেষে যত শ্রীঘই সম্ভব অনুচ্ছেদ ১৬ অনুসারে নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী এবং উক্ত আর্থিক বছরের বার্ষিক কর্মপ্রতিবেদন ও পরবর্তী আর্থিক বছরের প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা সরকারের কাছে পেশ করিবে। ১৭ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, দফা (২) অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত নিরীক্ষিত হিসাব ও বার্ষিক বিবরণী সরকারি গেজেটে প্রকাশ করিতে হইবে এবং সংসদে পেশ করিতে হইবে। ১৮ ধারায় বলা আছে, করপোরেশন প্রত্যেক বছর, বিধি দ্বারা নির্ধারিত তারিখে এবং নির্ধারিত ছকে, প্রত্যেক আর্থিক বছরের প্রাক্কলিত আয় ও ব্যয় এবং উক্ত আর্থিক বছরে সরকারের নিকট হইতে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হইতে পারে উহার বিবরণী অনুমোদনের জন্য সরকারের নিকট দাখিল করিবে। ২১ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার এই আদেশের বিধানাবলী কার্যকর করিবার উদ্দেশ্যে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবে। ২২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, বোর্ড প্রয়োজনীয় ও সমীচীন মনে করিলে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে এই আদেশের বিধানাবলী বা সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধিমালার সহিত সামঞ্জ্যপূর্ণ হওয়াসাপেক্ষে প্রবিধানমালা প্রণয়ন করিতে পারিবে। আইনে উল্লেখ প্রতিটি বিষয় বাপক উপেক্ষা করেছে এবং তাদের প্রয়োজনে আইনের বিভিন্ন ধারার অপব্যাখ্যা করে কাজ করেছে। এ ধরনের অনিয়মের বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনের প্রতিনিধি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, বাপকের বার্ষিক প্রতিবেদন সরকার ও সংসদের নিকট উপস্থাপন না করে সম্পূর্ণভাবে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন অর্ডার, ১৯৭২-এর ২১ ধারামতে, বাপক বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়নি অথচ আইন ভঙ্গ করে ২২ (১) ধারা মতে প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে প্রবিধানমালা অনুসরণ না করে সরকার প্রণীত প্রবিধানমালার নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে বাপক অনিয়ম করেছে। আইন ও বিধিমালার পরিপন্থী বোর্ড জনবল সৃজন করে নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও জনবল নিয়োগ, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাপক কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। তাদের নিয়োগ, চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যা বাপকের কর্মচারী প্রবিধানমালা, ১৯৯০-এর পরিপন্থী। বাপকের কর্মচারী প্রবিধানমালা, ১৯৯০ অনুযায়ী দৈনিক ভিত্তিতে লোক নিয়োগের কোনো সুযোগই নেই। অথচ বাপকে কর্মরত ৩ জন মহাব্যবস্থাপকের মধ্যে ২ জনকে, ৩০ জন ব্যবস্থাপকের মধ্যে ১৬ জনকে, ৬৯ উপব্যবস্থাপকের মধ্যে ২৫ জনকে, ৪১ জন নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে ১৮ জনকে, ৬ জন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার মধ্যে ৩ জনকে, ২২ জন সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে ১৬ জনকে, ১ জন সহকারী রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপকের মধ্যে ১ জনকে, ১ জন সহকারী বেকারের ১ জনকে, ২ জন সহকারী বেকারের মধ্যে ১ জনকে, ৩ জন সহকারী শেফের মধ্যে ৩ জনকে, ১ জন সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তার মধ্যে ১ জনকেই অবৈধভাবে দৈনিকভিত্তিক থেকে স্থায়ী করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ ২২৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৮৭ জনকেই নিয়োগবিধি ছাড়াই নিয়োগ দিয়ে পরে পদোন্নতি দিয়েছে বাপক। এ ছাড়া ২৩১ জন কর্মচারীর কাউকেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ না দিয়ে অস্থায়ী নিয়োগের স্থায়ী করা হয়।
কর্মকর্তারা জানান, পদশূন্য না থাকলেও স্থায়ী নিয়োগ থেকে স্থায়ী করে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলাও নষ্ট হয়েছে। অথচ এত বড় অনিয়মে দায়ীদের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না দুদক।
ব্যাপক এই অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ,পদোন্নতি ও পদায়নের সাথে জড়িত বোর্ডের সদস্য ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানানো যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে বোর্ড পুনর্গঠনের জন্য অতিদ্রুত পর্যটন আইন প্রণয়ন প্রয়োজন; পাশাপাশি বিধিমালা প্রণয়নও।
বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পর্যটন করপোরেশনের (বাপক) সাবেক চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী বলেন, আমরা পূর্ববর্তী পর্ষদ সভাগুলো অনুসরণ করেই নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছি। এখানে বিধিবিধানের লঙ্ঘন হয়নি। মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রবিধানমালা এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করা হয়েছে উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, কমিটি আমাদের কথা শোনেনি। তারা নিজেদের মতো করেই প্রতিবেদন দিয়েছে। আমাদের কথা শুনলে ডকুমেন্টস দিয়ে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারতাম।
নিয়োগ-পদোন্নতিতে অনিয়ম হয়নি দাবি করে বাপকের সাবেক পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মুহম্মদ মউদুদউর রশীদ সফদার বলেন, আমার মনে হয় তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিষয়টি গভীরভাবে না বুঝেই প্রতিবেদন দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, আপনি যে অভিযোগের বিষয়টি শুনেছেন তা সত্য। আমরা তদন্তে পর্যটন করপোরেশনের এসব অনিয়ম প্রমাণ করেছি এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমস্ত ডকুমেন্টস দুদকে পাঠিয়েছি। তিনি আরও বলেন, দুদকও হয়তো বেসিক তদন্ত করবে। কারণ বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া অনেকে ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। আশা করছি, দুদক তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে।
Leave a Reply