আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরা মধ্যপ্রাচ্যে ইয়াবা পাচার করছে। পোশাক বা বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে পার্সেলের মধ্যে বিশেষ কৌশলে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে এসব ইয়াবা। একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কিশোরগঞ্জ শাখার একজন কর্মকর্তাও জড়িত এই চক্রের সঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্যে ইয়াবা পাচার করছে- এমন পৃথক তিনটি আন্তর্জাতিক ইয়াবা পাচার চক্রের সন্ধান পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা গোয়েন্দা বিভাগ।
ডিএনসির ঢাকা গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, সম্প্রতি এমন দুটি চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের একটি চক্রকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কুরিয়ারে ইয়াবা পাচার ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীর কাছে দেশ থেকে পোশাক পাঠানোর নামে পার্সেলের মধ্যে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। গত ৫ জুন তেজগাঁওয়ের একটি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস থেকে একটি ট্রলিব্যাগ জব্দ করে ডিএনসির গোয়েন্দা বিভাগ। তাতে থাকা তিনটি পাঞ্জাবি, দুটি পায়জামা এবং তিনটি প্যান্টের মধ্যে পাওয়া যায় এক হাজার পিস ইয়াবা। এগুলো ট্রলিব্যাগে ভরে সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসী সাইদুর ওরফে সাইদের কাছে পাঠানোর জন্য সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মতিঝিল শাখায় পার্সেল করেন শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় শাহ আলমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএনসির গোয়েন্দা বিভাগ। গ্রেপ্তার অপর দু’জন হলেন- মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার পুরাতন বাওশিয়া গ্রামের ইউসুফ মোল্লা ও তার গাড়িচালক সাদ্দাম হোসেন। শাহ আলমের বাড়ি গাজীপুরের টঙ্গী থানার দত্তপাড়ায়। শাহ আলম তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের কাছে সৌদিতে সাইদের কাছে ইয়াবা পাচারের কথা স্বীকার করেছেন।
আন্তর্জাতিক মাদক কারবারির পৃথক একটি চক্রের সদস্য কিশোরগঞ্জের আবু দারদা ৭ আগস্ট সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কিশোরগঞ্জ শাখায় ছয়টি ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে যান। এটির কার্যালয় কিশোরগঞ্জের নিউ টাউন স্টেশন সড়কে। আবু দারদাকে ব্যাগসহ রিসিভ করেন এই শাখার ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান শামীম। যদিও কোনো ব্যক্তির পার্সেল তার রিসিভ করার কথা নয় এবং পার্সেল গ্রহণের জন্য কাউন্টার রয়েছে।
সৌদি আরবে অবস্থানরত মোজাম্মেলের কাছে পাঠানোর জন্য এ ছয়টি পার্সেল আনা হয়। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের বড়বাধ গ্রামে। তার সঙ্গে সখ্য রয়েছে ম্যানেজার মোস্তাফিজুরের। তার কাছে আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোর মাধ্যমে অপরিচিত এক বাংলাদেশির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি পাঠিয়ে দেন মোজাম্মেল। এ ছয়টি পার্সেলের মধ্যে তিনটিতে পোশাকের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার পিস ইয়াবা পাচার করা হচ্ছিল। মোজাম্মেলের কাছে পাঠানো পার্সেলগুলোয় প্রেরকের ঠিকানার জায়গায় আবু দারদার নাম-পরিচয়ের পরিবর্তে ওই জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা ব্যবহার করেন মোস্তাফিজুর। যিনি পার্সেল পাঠাবেন তার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও ম্যানেজার মোস্তাফিজুর বিশেষ সুবিধা নিয়ে ইয়াবা পাচারে সহায়তা করতে অপরিচিত ব্যক্তির নাম-পরিচয় ব্যবহার করেন প্রেরকের ঠিকানায়।
পার্সেলগুলো ঢাকায় সুন্দরবন ফরেন শাখায় যায়। সেখান থেকে ফকিরাপুলের খান ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তেজগাঁওয়ের একটি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো হয়।
ওই ঘটনায় মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের গোয়েন্দা টিম কিশোরগঞ্জ থেকে ম্যানেজার মোস্তাফিজুরকে গ্রেপ্তার করে। তার তথ্যমতে আবু দারদাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আবু দারদার বাড়ি কিশোরগঞ্জের মোকছেদপুর গ্রামে। এ অভিযানে অংশ নেওয়া ডিএনসির ঢাকা গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, ‘ইবাবা পাচারে জড়িত অপর সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
Leave a Reply