মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী আর নেই। তিনি গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৫ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গতকাল বাদ আসর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় জানাজা শেষে তাকে সেখানেই দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পৃথক শোকবার্তায় তারা প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জিয়াউদ্দিন তারিক আলী রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ ও ছায়ানটের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশায় প্রকৌশলী তারিক আলী যৌবনের শুরু থেকেই ছিলেন সংগীতের প্রতি নিবেদিত। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে তার সংগীতশিক্ষণ এবং ছায়ানটের সঙ্গে ছিল আজীবন সম্পৃক্ততা। সত্তর সালে গণসংগীত দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি রাজপথে গান গেয়ে বেড়িয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুক্তিসংগ্রামী শিল্পীদলের সদস্য হয়ে শরণার্থী শিবির, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প, মুক্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। লিয়ার লেভিন ধারণকৃত সেই দলের সাংস্কৃতিক কর্মকাে র ফুটেজ কয়েক দশক পর উদ্ধার করেন প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও তার সহধর্মিণী ক্যাথরিন মাসুদ; তাদের সঙ্গী ছিলেন নিউ জার্সিতে সেই সময় কর্মরত তারিক আলী। পরে তারেক মাসুদ নির্মিত ‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্যচিত্র তরুণদের বিপুলভাবে আলোড়িত করে এবং তারিক আলী ছিলেন এই প্রামাণ্যচিত্রের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী আটজন ট্রাস্টির অন্যতম ছিলেন তারিক আলী। আগারগাঁওয়ে বিশালকায় নতুন জাদুঘর নির্মাণ কাজেরও তিনি ছিলেন প্রধান সমন্বয়ক।
আরও শোক :জিয়াউদ্দিন তারিক আলীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীরউত্তম, মহাসচিব হারুন হাবীব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দুই সভাপতি সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার ও হিউবার্ট গোমেজ এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সদস্য-সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, আরমা দত্ত এমপি, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান, সাবেক সচিব নাসিরউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ূয়া, অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান বাবু, সাবেক ছাত্রনেতা মিহির কান্তি ঘোষাল, তাপস হালদার, মো. হেলালউদ্দিন, সাইফ আহমেদ, অনয় মুখার্জী প্রমুখ।
Leave a Reply