ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশি করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। দ্রুতগামী গাড়ি চলাচলের সময় একই রাস্তায় উল্টোপথে বেপোরোয়াভাবে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করার কারণেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। কখনো কখনো রাস্তাপারের সময় ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর ঘটনাও।
গত কয়েক দিন হানিফ ফ্লাইওভার (যাত্রাবাড়ী) থেকে সাইনবোর্ড এলাকায় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৫-৬ কিলোমিটার সড়কের কমপক্ষে ছয়টি স্থানে পুলিশ সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি করছেন। প্রতিদিনের চিত্র একই হওয়ার কারণে সার্জেন্টদের এড়ানোর জন্য বেশির ভাগ গাড়িই সড়কের বাম পাশ দিয়ে না গিয়ে ডান পাশ দিয়ে চলাচল করার চেষ্টা করছে। ট্রাফিক পুলিশরাও নাছোড়বান্দা। তারাও তাদের পছন্দ মতো গাড়িগুলো আটক করতে একপর্যায়ে রাস্তার মাঝখানে এসে গাড়ি আটক করে তারপর সাইডে নিয়ে দাঁড় করাচ্ছেন। ছয়টি চেকপোস্টের মধ্যে সাইনবোর্ড মোড়, রাজধানী ফিলিং স্টেশন মোড়, রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও হানিফ ফ্লাই ওভারের অদূরে (যাত্রবাড়ী) দূরত্বের মধ্যে আরো দুইটি পয়েন্টে যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা যায়। প্রত্যেকটি তল্লাশি পয়েন্টে দেখা গেছে ট্রাফিক সার্জেন্ট তার মোটরসাইকেলে বসে থাকছেন। আর ট্রাফিক কন্সটেবল দুইজন হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তার মাঝখানে এসে গাড়ি আটক করছেন। দ্রুতগামী সড়কের ছয় কিলোমিটারের ব্যবধানে এতগুলো চেকপোস্ট থাকায় প্রতিনিয়ত ওই সড়কগুলোতে যানজট লেগে থাকছে। এরমধ্যে ডেমরা থানার পুলিশকেও অনেক সময় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা যায়।
রায়েরবাগ এলাকার একজন চা দোকানি এ প্রতিবেদককে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রতিদিন পুলিশ এই স্পটে গাড়ি তল্লাশি করছে। এ ছাড়া বাস স্টপেজ হওয়ায় সারাক্ষণ এলাকাটিতে তীব্র যানজট লেগেই থাকছে। এর মধ্যে যখনই রাস্তা ফ্রি থাকে তখনই সার্জেন্টরা গাড়ি থামানোর জন্য রাস্তার মাঝখানে চলে যাচ্ছেন। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অনেক ড্রাইভার আছে বদমেজাজি। তারা সার্জেন্টের সিগন্যাল না মেনেই দ্রুত গাড়ি টান দিয়ে চলে যেতে পারে। আর তখনই ঘটতে পারে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ট্রাফিক কন্সটেবলদের এই বিষয়টি মাথায় রেখে দায়িত্ব পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি।
শনির আখড়া এলাকার একজন ফল ব্যবসায়ী বলেন, সার্জেন্টরা প্রতিদিন দেখি শুধু বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটক করে। এরপর তাদের কী করা হয় সেটি আর আমরা দেখি না।
গত বুধবার যাত্রাবাড়ী থেকে বাজার করে বাসে মাতুয়াইলের বাসায় যাচ্ছিলেন এক দম্পত্তি। মিনিবাসটি শনির আখড়া স্টপেজ থেকে যাত্রী তোলার মুহূর্তে একজন ট্রাফিক কন্সটেবল দুই হাত ছড়িয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান। এরপর তিনি কাগজ দাবি করেন। এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে চালক তার সুপারভাইজারকে বলেন, ওই দেখতো কী বলতে চায় ? এরপর সুপারভাইজার নেমে ট্রাফিকের হাতে ১০০ টাকা গুঁজে দিলে সাথে সাথে গাড়িটি আবার চলতে শুরু করে। এভাবে যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্টে যানবাহন তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে বলে চালকরা অভিযোগ করেন।

এ দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টের সামনে দিয়েই প্রতিনিয়ত উল্টো পথে গাড়ি চলাচল করছে। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উল্টো পথে যানবাহন চলাচল করার কারণে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার ওভারব্রিজ থাকার পরও অনেকে দ্রুত নিচ দিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির চাকায় পড়ে পিষ্ট হচ্ছেন। সম্প্রতি রায়েরবাগ এলাকায় রাস্তা পার হতে গিয়ে সিরাজুল ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল জসিম উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সিএমএইচকে ভর্তি করার দুই দিন পর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
Leave a Reply