► বন্দর জেটি ফাঁকা থাকা
► জোয়ারের আগেই বহির্নোঙরে পৌঁছা
► বন্দর পাইলট বোর্ডিংয়ের আগে জাহাজ প্রস্তুত থাকা
বহির্নোঙরে সাগরে পৌঁছার পর স্বাভাবিক সময়ে একটি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভিড়তে সময় নেয় তিন দিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টা। জাহাজজট থাকলে সেটি আট থেকে ১০ দিনও লাগে। কিন্তু বহির্নোঙরে পৌঁছার মাত্র ছয় ঘণ্টা পর পণ্যভর্তি বিদেশি কনটেইনার জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়তে পেরেছে; যা বন্দরের জন্য অনন্য রেকর্ড।
সিঙ্গাপুর বন্দরের জন্য এ ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক হলেও চট্টগ্রাম বন্দর এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য সেটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার। আর পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজটির নাম মানাতি; জাহাজটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর থেকে বহির্নোঙরে পৌঁছয় গত সোমবার সকাল ৯টায়; আর সেদিন বিকেল ৩টায় জাহাজটি জেটিতে ভেড়ে।
কিভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে জাহাজটির শিপিং এজেন্ট ক্রাউন নেভিগেশন লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেদ সারোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানত তিনটি কারণে বহির্নোঙরে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষার পর জাহাজটির জেটিতে ভেড়া সম্ভব হয়েছে। সেগুলো হলে—বন্দর জেটি ফাঁকা থাকা, জোয়ারের আগেই বহির্নোঙরে পৌঁছা এবং বন্দর পাইলট বোর্ডিংয়ের আগে জাহাজ প্রস্তুত থাকা। এসব ব্যাটে-বলে হওয়ার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আবার কলম্বো বন্দর (রাউন্ড ট্রিপ) যেতে স্বাভাবিক সময়ে ২০ দিন লাগে; এখন সেটি লাগছে ১৫ দিন। বাড়তি ছয় দিন আমরা সাশ্রয় করতে পারলাম শুধু বন্দরে কনটেইনারজট ও জাহাজজট না থাকায়। বাড়তি সময় সাশ্রয় মানে জাহাজের বাড়তি ট্রিপ। এটি ধরে রেখে পরিকল্পনা তৈরি করেই চট্টগ্রাম বন্দরকে এগোতে হবে।
জানা গেছে, জাহাজটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো থেকে এক হাজার ১৪১ একক আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে সোমবার সকাল ৯টায় বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছয় এবং বন্দর রেডিও কন্ট্রোলে অবহিত করে। বন্দরের পাইলটরা জাহাজটি বহির্নোঙর থেকে চালিয়ে বন্দর জেটিতে ভেড়ান সোমবার বিকেল ৩টায়। সেদিন জাহাজের মুভমেন্ট ছিল বিকেল ৩টায় অর্থাৎ বহির্নোঙরে পৌঁছার ছয় ঘণ্টা পর জাহাজ জেটিতে ভিড়েছে। সাধারণ সময়ে যেটা তিন দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়। মূলত বন্দর কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার কারণেই ‘অন অ্যারাইভাল’ জাহাজ বার্থিং সম্ভব হয়েছে।
অন অ্যারাইভাল বার্থিং হলে কী লাভ হলো জানতে চাইলে শিপিং কম্পানি জিবিক্স লজিস্টিকসের অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাসির রুবাইয়াত বলছেন, ‘তিন দিন বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থাকতে হবে মাথায় নিয়েই আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য জাহাজ ভাড়া ও শিডিউল চূড়ান্ত করি। এখন তিন দিন জাহাজ ভাড়া বাবদ ২৫ থেকে ৩০ হাজার ইউএস ডলার সাশ্রয় হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। এটা চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। একই সঙ্গে বন্দর সম্পর্কে নতুন ধারণা দিল বিশ্ব শিপিং সেক্টরে। এখন শুধু জাহাজজট নয়; চট্টগ্রাম বন্দরে অন অ্যারাইভাল জাহাজ বার্থিং হচ্ছে।’
কয়েক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম বন্দর জেটি ফাঁকা থাকছে। মূলত খোলা পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা কমে আসা, পণ্য ওঠানামায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, বন্দরে কনটেইনার রাখার স্থান বাড়ানো এবং দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত হওয়ায় এই সুফল মিলেছে। জেটি ফাঁকা থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন দিনে ১৩টি পর্যন্ত কনটেইনার জাহাজ বার্থিং দিচ্ছে; যা নিকট অতীতে খুব বেশি দেখা যায়নি। জোয়ার-ভাটার নির্ভরশীলতা না থাকলে আরো দ্রুত পণ্যবাহী জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারত এবং কম সময়ে বন্দর ছেড়ে যেতে পারত।
কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়তে জোয়ার-ভাটার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ভাটার সময় কর্ণফুলী নদীতে পানির উচ্চতা জাহাজ প্রবেশের মতো উপযোগী থাকে না। ফলে বহির্নোঙরে জাহাজ যখনই আসুক না কেন বা জেটিতে পণ্য নামানো যত আগেই শেষ হোক না কেন জোয়ারের অপেক্ষায় থাকতে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের আইন লঙ্ঘন করায় জাহাজ মালিককে জরিমানা
Leave a Reply