আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কুড়িগ্রামের শান্তা ইসলাম। ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এ পরীক্ষা হওয়ার কথা। ঢাকায় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন নেই তার। ফলে রাজধানীতে এসে কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই শান্তার। হোটেলে থাকতে হলে সেখানকার নিরাপত্তা ও খরচ নিয়েও উদ্বিগ্ন তিনি ও তার পরিবার।
এ নিয়ে ঢাকায় পরিচিত একজনের সঙ্গে আলাপকালে শান্তা জানতে পারেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বাসন্তী নিবাসের কথা। যেখানে মাত্র ৭১ টাকায় মিলছে এক রাত থাকার ব্যতিক্রমী সুবিধা। অনলাইন থেকে বাসন্তী নিবাসের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে বুকিংও দিয়েছেন তিনি।
ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের জন্য ‘এক টাকায় আহার’ সুবিধা চালু করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কয়েক বছর ধরেই বহুল আলোচিত। এরই ধারাবাহিকতায় মিরপুরের পল্লবীতে গত ৮ মার্চ থেকে শুধুমাত্র নারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য বিদ্যানন্দ এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছে। বিদ্যানন্দের অফিসের একটা ফ্লোরেই নারীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় এখানে একসঙ্গে থাকতে পারবেন ৩৮ জন নারী। এটি নারীদের জন্য তৈরি দেশের প্রথম ‘ক্যাপসুল হোটেল’ বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
সরেজমিন দেখা যায়, বাসন্তী নিবাসের প্রবেশমুখেই রয়েছে অভ্যর্থনার ব্যবস্থা। এরপর ভেতরের রুমের সঙ্গে একটি আলাদা পার্টিশন এবং দরজা। প্রবেশ দরজায় চারকোনা একটি স্বচ্ছ কাচ। রুমের ভেতরে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে কালো রঙের বাঙ্ক বেড (একটি বেডের ওপর আরেকটি)। প্রতি সারিতে চার-পাঁচটি করে বাঙ্ক বেড। ১৯টি বেডে ৩৮ জন থাকতে পারবেন। রুমের শেষ প্রান্তে কমন বাথরুম। সেখানে অত্যাধুনিক ডিজাইনের বেসিন ও টাইলস বসানো হয়েছে।
আছে কাপড় ধোয়ার ওয়াশিং মেশিন। এ ছাড়া নারীদের জন্য রয়েছে পাঁচ টাকায় সেনিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন ব্যবহারের সুবিধা। রয়েছে আলাদা ডাইনিং রুম এবং ওয়াইফাই সুবিধা। বাসন্তী নিবাসে থাকতে হলে শিক্ষার্থী কিংবা চাকরিপ্রার্থী নারীকে তার প্রমাণস্বরূপ কাগজপত্র দেখাতে হবে। এখানে হোটেলের নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে সব কর্মচারীই নারী। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
বাসন্তী নিবাসের ইনচার্জ তাহমিনা আকতার বলেন, বিদ্যানন্দ সবসময় সাধারণ মানুষ নিয়ে কাজ করে। বাসন্তী নিবাস যাত্রা শুরুর পর থেকেই খুব সাড়া পাচ্ছেন। নারীরা আসছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় এখনও বিষয়টি তেমন প্রচার পায়নি। প্রতিদিন দু-একজন আসছেন। অনেকেই ফোনে খোঁজখবর নিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নারীরা আরও ব্যাপকহারে আসা শুরু করবেন। প্রয়োজন সাপেক্ষে আসন সংখ্যাও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সংশ্নিষ্টরা জানান, এখানে যারা থাকবেন তারা বিদ্যানন্দ থেকে খাবার কিনতে পারবেন। চাইলে বাইরে থেকে এনেও খেতে পারবেন। বিদ্যানন্দ প্রতিদিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করে। সেই একই খাবার এখানকার স্বেচ্ছাসেবীরা খেয়ে থাকেন। হোটেলে যারা থাকবেন তারা চাইলে এই খাবারও খেতে পারবেন, তবে এর জন্য নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ প্ল্যানারস ইনস্টিটিউটের সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বিভিন্ন মানুষ নানা কাজে ঢাকায় আসেন। এখানে এসে তাদের অধিকাংশকেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ক্ষেত্রে মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। অল্প টাকায় মেয়েদের থাকার জন্য এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। নগরীর জন্যও এটা একটা ইতিবাচক দিক। তবে সবকিছুর আগে অবশ্যই নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
Leave a Reply