1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
পেট্রোনাস লুব্রিক্যান্টস বিক্রি করবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ মন্ত্রী এমপিদের দেশত্যাগের হিড়িক : নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন অনেকেই বাস ড্রাইভার নিকোলাস মাদুরো আবারও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ইউএস-বাংলার দশম বর্ষপূর্তি : ২৪ এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে বিদেশে ২০ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী পরিবহন তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বিশ্বখ্যাত মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড রয়েল এনফিল্ড খুব শিগগিরই বাজারে আসছে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমটি কনসার্টো জাহাজে বাংলাদেশী নাবিকের মৃত্যুর তদন্ত দাবি লুব্রিকেন্ট আমদানিতে বাড়তি শুল্কায়নে ডলার পাচার বাড়বে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সম্পাদক ওসমান আলীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, অপসারণ দাবি

শুভ জন্মদিন : শিকড়সন্ধানী উদ্বাস্তু আহমদ রফিক

মফিদুল হক
  • আপডেট : শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার যে অঞ্চল হিন্দু-মুসলমানের সংস্কৃতিসাধনায় ছিল সমৃদ্ধ, ১৯২৯ সালে মেঘনা তীরের সেই শাহবাজপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। তখনো হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে মিলের পাশাপাশি অমিলের জায়গাও ছিল, তবে সংঘাত কখনো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। শিক্ষাদীক্ষায় হিন্দু সমাজ ছিল এগিয়ে, পেশার কারণে নগরবাসী হয়েছেন তাঁরা অনেকে, কিন্তু গ্রামের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটেনি। বাল্যকালে গ্রামে খুব একটা থাকা হয়নি আহমদ রফিকের, কিন্তু বাল্যস্মৃতি কখনো মুছে যায়নি তাঁর স্মৃতি থেকে।
নিজে বস্তুবাদী হলেও বস্তুবাদীদের মতো ভাবসংগীতকে সরাসরি নাকচ করে দিতে পারেননি আহমদ রফিক, একেবারে বাল্যে তাঁর অন্তরে কিভাবে অনুরণন তুলেছিল এই সুরগান সেই ব্যাখ্যাদান দুষ্কর। পরে তিনি লিখেছেন, ‘বিষয় চেতনহীন মরমি ভাবনার পেছনে ভক্তিবাদী প্রভাব প্রধান হলেও নদীমাতৃক প্রকৃতির প্রভাবও হয়তো ছিল। ভাটিয়ালি গানের জীবনচেতনার পাশাপাশি এর অন্যান্য শাখায় পরম চেতনার প্রকাশ গ্রামীণ ধারার দুই বিপরীতকেই বোধ হয় তুলে ধরে। এর উৎস যে ঠিক কোথায় তা নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সহজ নয়। অন্তত আমার তা স্পষ্ট করে জানা নেই।’
বাল্যেই তাঁর পারিবারিক জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়।
১৯৩৭ সালের মাঝামাঝি গ্রামের পাট চুকিয়ে গোটা পরিবার স্থান পাল্টে ঠাঁই নেয় নড়াইল শহরে। নড়াইলে স্কুলবালক আহমদ রফিক চল্লিশের দাঙ্গার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন, পাকিস্তানের জন্য মুসলমানদের ঘোর উন্মাদনাও প্রত্যক্ষ করেন। এসব কারণে ম্যাট্রিক পরীক্ষার তারিখ ক্রমাগত পেছাতে থাকে, শহরতলিতে মাস্টার মশাইয়ের বাড়ির দাওয়ায় মাদুরে বসে তিন শিক্ষার্থীর অলস সময় কাটে পরীক্ষার প্রতীক্ষায়—আহমদ রফিক, দেবু, পাশের বাড়ির পরীক্ষার্থিনী জ্যোত্স্না। তাদের মাস্টার মশাই রবীন্দ্রভক্ত, শেলি-শেকসপিয়ারেরও, তাঁর আলোচনায় সাহিত্যের কথাই থাকে বেশি। সম্প্রীতির শহর নিস্তরঙ্গ নড়াইলের বাইরে অন্ধ তামসিকতায় দেশ তখন দুলে উঠছে। বড়দা এরই মধ্যে বদলি হয়েছেন ঝিনাইদহতে।
কলেজে পড়ার জন্য চিত্রা তীর ছেড়ে তাঁকে আসতে হয় ধলেশ্বরী তীরে, মুন্সীগঞ্জে। জীবনে উন্মূল হওয়ার প্রক্রিয়া আহমদ রফিকের শুরু হয়েছিল একেবারে বাল্যে, যখন পিতৃহীন বালক আট বছর বয়সে মা-ভাই-বোনসহ শাহবাজপুর গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় পেয়েছিলেন বড় ভাইয়ের সংসারে নড়াইল শহরে। অচেনা এই শহর নানাভাবে আপন করে নিয়েছিল দূরাগত বালককে। শহরে বেড়ে ওঠা তাঁর কৈশোর ঝলমলিয়ে উঠেছিল নড়াইলের প্রকৃতি, নদী ও মানুষের কল্যাণে। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর শহরত্যাগী বালক আবার যখন ফিরেছিল শহরে তত দিনে দেশভাগের অভিঘাতে নড়াইল পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত শহরে। এই ভূতুড়ে শহর ছেড়ে প্রায় যেন ছুটে পালিয়েছিলেন আহমদ রফিক, জীবনে আর ফেরেননি এখানে, যদিও ফেরার অনেক অবকাশ তৈরি হয়েছিল স্বাভাবিকভাবে।
নড়াইল ছেড়ে উন্মূল বালক উদ্বাস্তু যুবকে পরিণত হয়েছিলেন, তাঁর নিজের ইচ্ছা-বাসনা বিসর্জন দিতে হয়েছিল অভিভাবকদের মতামতের কাছে, যে অভিভাবকদের সামনেও খুব বেশি সুযোগ উন্মুক্ত ছিল না। বাধ্যত তাঁকে আসতে হয় মুন্সীগঞ্জে, মেজো চাচার পরিবারের আশ্রয়ে, কেননা এখানে থাকলে হরগঙ্গা কলেজে পড়ার সুবিধা হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই বিক্রমপুরবাসী হয়েছিলেন আহমদ রফিক, তবে যৌবনের সেই উত্তাল বয়সে দুঃখ-বেদনা জয় করে জীবনের সাধনায় মগ্ন হওয়ার শক্তি থাকে অনেক বেশি। আর তাই বিক্রমপুরে কলেজের পাঠকালে অনেক রকম অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন আহমদ রফিক, বাম মতাদর্শ তথা কমিউনিজমে তাঁর দীক্ষাও এখানে ঘটে, যদিও তিনি পার্টির আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ গ্রহণ করেননি, পাকিস্তানি পীড়নের সেই কৃষ্ণ সময়ে পার্টি পুলিশতাড়িত সন্ত্রস্ত ভূতলজীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছিল, নতুন সদস্য পদ দেওয়ার মতো সুযোগ তারা নিতে পারেনি, পার্টি অনুগামী কিংবা কর্মী পেলেই ছিল সন্তুষ্ট।
১৯৪৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আহমদ রফিকের শিক্ষাজীবন বিঘ্নিত হয়েছিল বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কারণে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রভাব ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকার ৯২-ক ধারা জারি করে প্রদেশের শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ করে এবং দেশবাসীর ওপর নেমে আসে নিপীড়নের খড়্গ। আহমদ রফিক কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক কোনো পদধারী ছিলেন না, তবে তিনি ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের বামপন্থী উজ্জ্বল তরুণ শিক্ষার্থী। এর দায়ভার তাঁকে পোহাতে হয় এবং হুলিয়া মাথায় নিয়ে গ্রেপ্তারি এড়াতে তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে হয়। এই অভিজ্ঞতাও বাস্তুচ্যুতির আরেক উদাহরণ, যদিও সেটা এককভাবেই ব্যক্তিকে পোহাতে হয় তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে। এমন ক্ষেত্রে সাধারণভাবে দল সহায় হয় ব্যক্তির, তবে আহমদ রফিকের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি, দল তাঁর সংকট মোচনে কোনোভাবে সহায়ক হয়নি। উপরন্তু সম্পত্তি ক্রোকের শঙ্কা এড়াতে শাহবাজপুরের গ্রামে পৈতৃক সম্পত্তিতে পুত্র আহমদ রফিকের অংশ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তাঁর মা। স্মৃতিভাষ্যে এর উল্লেখ করেছেন আহমদ রফিক খুব স্বাভাবিকভাবে, তবে এর ফলে পিতৃপুরুষের ভিটামাটির সঙ্গে তাঁর আনুষ্ঠানিক যোগ ছিন্ন হয়ে যায়, বৈষয়িক যোগের পাশাপাশি এর এক আত্মিক দিকও রয়েছে, বিষয়-উদাসীর মনে তার কোন ছাপ রয়ে যায় কে জানে। তবে শাহবাজপুরের প্রতি তাঁর টান তো জন্মের মাটির সঙ্গে যোগ, সেটা ছিন্ন হতে দিতে সম্মত ছিলেন না আহমদ রফিক, আর তাই দেখি পেশায় কিছুটা স্থিত হওয়ার পর ষাটের দশকের মধ্যভাগে আত্মীয়-বন্ধুদের নিয়ে তিনি শাহবাজপুরে গ্রাম উন্নয়নের সমবায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। রূঢ় বাস্তবতা তাঁর এই প্রয়াসে সফলতা বয়ে আনেনি, নিজ গ্রামের সঙ্গে বন্ধনও তিনি কোনোভাবে গড়ে তুলতে পারেননি।
বামপন্থার আঁটসাঁট চিন্তাকাঠামোয় তিনি কখনো আবদ্ধ থাকেননি। নানামুখী গুরুগম্ভীর চিন্তাশীল গ্রন্থগুলোর রচয়িতা এই মানুষটি আবার লেখেন কবিতা, বাউল মাটিতে পড়ে থাকে তাঁর মন। জীবন তাঁকে করেছে উদ্বাস্তু, আর জীবনভর চলেছে তাঁর সাধনা মাটির গভীরে শিকড় জারিত করার, জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংলগ্ন হওয়ার। আমরা বুঝি জীবনের সমগ্রতা তিনি ধারণ করতে চান, আর সেই সমগ্রতার ছাপ মেলে তাঁর রচনাসম্ভারে। এখানেই তিনি অনন্য।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
mofidul_hoque@yahoo.com

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT