বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই ক্রান্তিকালে পুরো বিশ্ব যেখানে রীতিমতো নিজেদের রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে দুর্বৃত্তায়ন ও নানা দুর্ঘটনা। বিভিন্ন পেশাজীবীর সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনেকাংশেই যেন দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে। এমনকি জাতির বিষফোঁড়া সদৃশ দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য এই বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও কোনোভাবে কমেনি। বরং রীতিমতো তাদের হাতে প্রাণও দিতে হচ্ছে শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ প্রায় সব পেশাজীবীকে। ইদানীং এই জাতির জন্য কলঙ্কসদৃশ দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে এবং দমন করতে সরকারকে অনেকাংশেই বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধের চেয়েও বেশী মনোযোগ দিতে হচ্ছে।
এতকিছুর পরেও সম্প্রতি মাঠ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তার মুক্তিযোদ্ধা পিতাসহ প্রায় মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে আসতে হলো এই দুর্বৃত্তদের ভয়াবহ হামলার শিকার হয়ে।
সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ংকর দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুঝুঁকি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলছে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদে গত ৪ সেপ্টেম্বর এক ভয়াবহ বিস্টেম্ফারণে অনেক মুসলিল্গ নিহত হয়েছেন এবং অনেকেই তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। করোনার ক্ষত থেকে ঠিকভাবে রক্ষা পাওয়ার আগেই যেন জাতি আরেকটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলো। এ যেন শুধু মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের এক একটা তাজা মানুষের অসহ্য যন্ত্রণা নয়, এক একটা পরিবারের শুধু স্বজন হারানোর বেদনা নয় বরং পুরো জাতি আজ ক্রন্দনরত অবস্থায় পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায়শই গার্মেন্ট কারখানা, শিল্প, বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন, শপিংমল সবক্ষেত্রে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। আগুন লেগে বহু মানুষের মৃত্যুর নজির রয়েছে। প্রতিটি ঘটনার শেষে দেখা যাচ্ছে, কাউকে না কাউকে দোষারোপ করা হচ্ছে। কোনো কোনো সময় নামমাত্র শাস্তি দেওয়া হলেও অধিকাংশ সময়ই দেখা যাচ্ছে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না। এমনকি এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। ফলে একই রকম ভয়ংকর দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে, ফলে তাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। এসব অগ্নিদুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে প্রায়শই বড় কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে। যার ফলে প্রাণ দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের এবং এসব ভয়ংকর দুর্ঘটনার ফলে প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধে সরকার যেমন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, ঠিক তেমনি সামাজিকভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ভয়ংকর দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে। নতুবা দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ চরমভাবে ব্যাহত হবে এবং দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে প্রাণহানি ঘটার মতো ভয় ও হতাশা কাজ করবে। তাই অতিদ্রুত সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব পেশাজীবীর সঙ্গে দুর্বৃত্তায়নের ঘটনা এবং সব ধরনের ভয়ংকর দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন দুর্বৃত্তায়নের শিকার কোনো পেশাজীবী না হয় এবং ভয়ংকর দুর্ঘটনার মাধ্যমে কারও প্রাণহানি না ঘটে, সেদিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ নজর দিয়ে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply