ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা করার পর এবার হেলিপোর্ট টার্মিনাল নির্মাণকে টার্গেট করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশ নেন।
দেশে দিন দিন ড্রোনের ব্যবহার বাড়লেও কোনো নীতিমালা ছিল না। গত দুই বছরে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে একটি সমন্বিত ড্রোন নীতিমালা করা হয়েছে, যা গতকাল মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। একই দিনে মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন (রহিতকরণ) আইন, ২০২০-এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এ রহিতকরণ আইনটি নিয়েও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত সাত বছর ধরে কাজ করেছে। এ আইন অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে বিমান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ড্রোন নীতিমালা ও বিমানের রহিতকরণ আইন অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হককে উদ্দেশ্য করে বলেন, এবার টার্গেট হওয়া উচিত হেলিপোর্ট টার্মিনাল নির্মাণের।
প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, এ ধরনের একটি নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। আমরাও থার্ড টার্মিনালের পাশাপাশি হেলিপোর্ট টার্মিনাল নির্মাণকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতিমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রথমবারের মতো দেশে আন্তর্জাতিক মানের একটি পূর্ণাঙ্গ হেলিপোর্ট টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ (বেবিচক)। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই কাওলায় প্রায় ১০০ বিঘার ওপর নির্মিত হবে হেলিপোর্ট টার্মিনাল। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। টার্মিনাল নির্মিত হলে ৮০টি হেলিকপ্টার একসঙ্গে অবস্থান করতে পারবে।
এভিয়েশন বিশ্লেষকরা বলেছেন, অসহনীয় যানজট এড়াতে সামর্থ্যবান ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, হাসপাতাল মালিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিকল্প পথ খুঁজছে। এর ধারাবাহিকতায় করপোরেট লেভেলে বৃদ্ধি পাচ্ছে হেলিকপ্টারের ব্যবহার। এছাড়া সিনেমার শ্যুটিং, রাজনৈতিক সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ, রোগী আনা নেওয়া, বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ড মিটিং থেকে শুরু করে ঢাকায় আসা-যাওয়ায় ব্যবহার হচ্ছে হেলিকপ্টার। কিন্তু প্রতিবার উড্ডয়নের জন্য সিভিল এভিয়েশন থেকে অনুমতি নিতে হয়। শুরুর দিকে দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ, সিনেমার শ্যুটিং, ওপর থেকে প্রজেক্ট এলাকা পরিদর্শন, ছবি তোলায় হেলিকপ্টারের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দ্রুত যানজট এড়িয়ে গন্তবে পৌঁছানোর জন্য জনপ্রিয় হয়েছে হেলিকপ্টার।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘সবার সহযোগিতা পেলে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই হেলিপোর্ট টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন হবে। থার্ড টার্মিনালের পর এটা বর্তমানে আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি।
বর্তমানে হেলিকপ্টার ব্যবহারে সরকারের নীতিমালা রয়েছে। সে অনুযায়ী নয়টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আরও কয়েকটি কোম্পানি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কোম্পানি হলো সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন আরএনআর এয়ারলাইনস। বর্তমানে তাদের সাতটি হেলিকপ্টার আছে। সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনসের চারটি, তিনটি করে রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও স্কয়ার গ্রুপের। এছাড়া একটি করে পিএইচপি গ্রুপের ও বাংলা ইন্টারন্যাশনালের হেলিকপ্টার রয়েছে। দুটি করে হেলিকপ্টার রয়েছে বিআরবি, ইমপ্রেস এভিয়েশন এবং এমএএস বাংলাদেশের। তার মধ্যে আরঅ্যান্ডআর, বিআরবি, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল, পিএইচপি এয়ারলাইনসের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হ্যাঙ্গার রয়েছে।
বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, দেশে শুরুতে মাসে হেলিকপ্টার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল গড়ে ৫০০ থেকে ১০০০। এখন তা বেড়ে মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস নামে একটি কোম্পানি বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করে। বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে নয়টি কোম্পানির ২৭টি হেলিকপ্টার রয়েছে। কোম্পানিগুলো আরও হেলিকপ্টার আনার জন্য সিভিল এভিয়েশনে আবেদন করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোলচত্বর লাগোয়া দক্ষিণে রেললাইনের পূর্ব পাশে বেবিচকের নিজস্ব জমিতেই হেলিপোর্ট টার্মিনাল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুত্র : দেশ রূপান্তর
Leave a Reply