আজ বাংলাদেশের গর্ব এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের অহঙ্কার টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকের জন্মদিন। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কেবল নিজের যোগ্যতা দিয়ে। শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকেই তার মা শেখ রেহানা নিদারুণ দুর্দশার মধ্যে পড়ে বড় বোন শেখ হাসিনাসহ এক দেশ থেকে অন্য দেশে আশ্রয়ের সন্ধানে ঘুরেছেন। তারপর একাকী তিনি দিল্লি থেকে ১৯৭৬ সালে লন্ডনে পৌঁছান এবং ১৯৭৭ সালে লন্ডনে অবস্থানরত ড. শফিক সিদ্দিককে বিয়ে করেন। সে সময় টিউলিপের রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী মায়ের চাকরি খোঁজা, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করা আর অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবির লড়াই মিলেমিশে একাকার ছিল।
জন্মের পর বড় হতে থাকা টিউলিপ পরদেশে আশ্রিত জীবনের বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করেছেন নিবিড়ভাবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তধারা তাকে আদর্শবাদী রাজনীতি চর্চায় উৎসাহী করেছে। মাতামহ বঙ্গবন্ধু যেমন পাকিস্তান আমলে প্রবল প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে নিজেকে জনগণের নেতায় পরিণত করেছিলেন; অন্যদিকে খালা শেখ হাসিনা যেমন বাংলাদেশে বারবার হত্যার সম্মুখীন হয়েও নিজেকে জননেত্রীতে পরিণত করেছেন, তেমনি আশ্রিত জীবনের দুঃখ-কষ্ট জয় করে টিউলিপ হয়ে উঠেছেন ফিনিক্স পাখি।
টিউলিপ ১৫ বছর বয়স থেকে হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্নে বসবাস করছেন। ওই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন ও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তিনি ২০১৫ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকায় লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন।
২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের মধ্যবর্তী নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকায় লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। তিনি ২০১৫ সালে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে প্রথমবারের মতো বক্তব্য রাখেন এবং প্রথম ভাষণেই নজর কাড়েন। বিবিসির তৈরি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সবচেয়ে স্মরণীয় নবনির্বাচিতদের ভাষণের তালিকায় স্থান পায় তার ওই ভাষণ। নিজেকে ‘একজন আশ্রয়প্রার্থীর কন্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে সে সময় মা শেখ রেহানার দুর্দশার বিবরণ দেন তিনি।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে টিউলিপ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেওয়ার লক্ষ্যে দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানের অস্ত্রোপচার পিছিয়ে বিশ্বব্যাপী সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলেন।
লন্ডনের স্বনামধন্য সংবাদপত্র ‘ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড’ প্রকাশিত ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন টিউলিপ। উল্লেখ্য, টিউলিপের সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টারের চ্যান্সেলর মাইকেল গভ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক ও শিক্ষামন্ত্রী গেভিন উইলিয়ামসনের মতো লন্ডনের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার দৌহিত্রীর যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য এক গৌরবজনক অধ্যায়। টিউলিপের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, সমাজের মূলধারায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণের উদ্যোগ, রাজনৈতিক মহলে ও সমাজের সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা এবং সাধারণ্যে জনপ্রিয়তা বাঙালি জাতিকে আরও গৌরবান্বিত করেছে।
অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
drmiltonbiswas1971@gmail.com
Leave a Reply