বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে আবারও ফিডার সার্ভিস শুরু করতে চায়। এই লক্ষ্যে সংস্থাটি জাহাজ বহরে ১০টি জাহাজ সংযুক্ত করার চেষ্টা করছে। তার মধ্যে চারটি জাহাজই থাকছে কনটেইনার বহনকারী। বিএসসির ঊর্ধ্বতন সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর এবং চট্টগ্রাম-কলম্বো বন্দরে বিএসসি আবারও নিজস্ব জাহাজ নিয়ে কনটেইনারবাহী ফিডার সার্ভিস চালু করতে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। এখন শুধু জাহাজ সংগ্রহের অপেক্ষা। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর সুমন মাহমুদ সাব্বির ইত্তেফাককে বলেন, বিএসসি চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর এবং চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে আবারও ফিডার সার্ভিস শুরু করতে চায়। এজন্য অন্যান্য জাহাজের পাশাপাশি চারটি কনটেইনারবাহী জাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। কনটেইনার জাহাজ কেনার প্রক্রিয়ায় দেশের বাইরে থেকে প্রস্তাব আসাও শুরু হয়েছে। কিন্তু বিষয়টির সঙ্গে ব্যাবসায়িক লাভালাভের প্রশ্ন জড়িত থাকায় যাচাই-বাছাই ও আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কমোডর সাব্বির বলেন, কনটেইনারবাহী জাহাজ সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এ ধরনের জাহাজ কেনার ক্ষেত্রে সহজ শর্তে এবং স্বল্পতম সুদে অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ বিষয়টির সঙ্গে সরকারের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও সংস্থার সক্ষমতা অর্জনের প্রশ্ন জড়িত। তাই যেভাবে বিএসসির আর্থিক লাভ আসবে সেভাবেই কনটেইনারবাহী জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে জি-টু-জি বা গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট চুক্তির প্রক্রিয়ায় এই চারটি জাহাজ কেনার কথা ভাবা হচ্ছে। দুই সরকারের চুক্তির মাধ্যমে সহজ শর্ত এবং স্বল্পতম সুদের বিষয়টি সংস্থার আর্থিক খাতের জন্য সহায়ক হবে। কারণ, ঋণের টাকা তো ব্যবসা করার মাধ্যমে ফেরত দিতে হবে।
তিনি জানান, একটি দেশ থেকে কনটেইনারবাহী জাহাজ কেনার ব্যাপারে বিএসসি প্রস্তাব পেয়েছে। ঐ প্রস্তাবে দেওয়া শর্তাবলি বেশ শক্ত ও কঠিন। তাই বিএসসি আরো প্রস্তাবের অপেক্ষা করছে। আশা করা যায় সহজ শর্তসংবলিত প্রস্তাব অন্যান্য বিদেশি সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। বিএসসির কয়েকটি সূত্র জানায়, ফিডার সার্ভিসের জন্য বিএসসির জাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় ডেনমার্কের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। আলোচনা-পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ডেনমার্কের প্রস্তাবে কঠিন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। কনটেইনারবাহী জাহাজ কিনতে প্রতিটি জাহাজের জন্য বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে খরচ পড়বে ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার। কাজেই এখানে অর্থসংস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে সূত্রগুলো জানায়। সূত্রগুলো জানায়, যদি আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কোনো প্রস্তাবদাতার সঙ্গে সমঝোতার পর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার পর প্রয়োজন হবে সরকারের অনুমোদন, এরপর সেটিকে উত্থাপন করতে হবে একনেকে। এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চারটি কনটেইনার জাহাজ সংগ্রহে কমপক্ষে দু-তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, বিএসসি বাংলার শিখা, বাংলার রবি এবং বাংলার মনি নামের তিনটি জাহাজের মাধ্যমে এক সময় চট্টগ্রাম বন্দরে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো থেকে মাদার ভেসেলের পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার পরিবহনে ফিডার সার্ভিস পরিচালনা করত। জাহাজ তিনটি মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরোনো হয়ে পড়ায় বিএসসি সেগুলো স্ক্র্যাপ জাহাজ হিসাবে বিক্রি করে দিলে ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে সংস্থাটি লাভজনক ফিডার সার্ভিস থেকে বিযুক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে কর্ণফুলী শিপিং নামে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি কোম্পানি তাদের দুটি জাহাজের মাধ্যমে কয়েক মাস আগে থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ফিডার সার্ভিসে কনটেইনার পরিবহন শুরু করেছে।
Leave a Reply