ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ
করোনার বিস্তার রোধে ৬৮ দিন সব বন্ধ থাকলেও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রাজধানীতে প্রাইভেটকার বেড়েছে চার হাজার ৪৩৬টি। যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিগত গাড়ি এই দুর্দিনেও দিনে গড়ে ২৪টি করে বাড়ছে। আগের বছরে ঢাকায় ১৫ হাজার প্রাইভেট গাড়ি বেড়েছে। তখন দিনে ৪১টি প্রাইভেটকার রাস্তায় নেমেছে। বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষ বলছেন, ভালো গণপরিবহন না থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে।
তবে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে বহুবার বলা হয়েছে, যানজট কমাতে প্রাইভেট গাড়ি কমানো হবে। সড়ক পরিবহন আইনে সরকারকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবহন বিশেজ্ঞরা বলছেন, যতই আইন হোক, গণপরিবহন উন্নত না হলে প্রাইভেটকার কমবে না। বরং মানুষ আরও বেশি প্রাইভেটকারের দিকে ঝুঁকবে। আরও যানজট বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস।
গত কয়েক বছর ধরে সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত হলেও প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণে সত্যিকারের উদ্যোগ নেই। ঢাকার যানজট নিরসনের সংশোধিত মহাপরিকল্পনায় (আরএসটিপি) প্রাইভেটকার কমাতে বলা হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রণীত মহাপরিকল্পনাতেও (এসপিটি) প্রাইভেটকার কমাতে গণপরিবহন ঠিক করতে বলা হয়েছিল। তিনটি মেট্রোরেল এবং তিনটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের সুপারিশ ছিল এসটিপিতে। ১৬ বছরে এসবের একটিও হয়নি। কিন্তু মহাপরিকল্পনায় না থাকলেও এ সময়ে সাতটি ফ্লাইওভার হয়েছে। প্রাইভেটকারের সংখ্যা সাত বছরে দ্বিগুণ হয়েছে।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেছেন, মহাপরিকল্পনায় গণপরিবহনকে গুরুত্ব দিলেও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বাসের পথ কমেছে। এতে প্রাইভেট গাড়ি বেড়েছে। অন্যদিকে গণপরিবহন মারাত্মক বিশৃঙ্খল ও অনিরাপদ। তাই যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তারা বাস ছেড়ে প্রাইভেটকারের দিকে ঝুঁকেছেন।
এসটিপি ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৬ সালে আরএসটিপি করা হয়। এতে পাঁচটি মেট্রোরেল এবং দুটি বিআরটি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। একটি মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) এবং একটি বিআরটির কাজ চলছে। জয়দেবপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত চলমান বিআরটির কাজ কবে শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমআরটি-৬ এর কাজ শেষ হতে আরও বছর তিনেক লাগবে।
ঢাকার বাসে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০১৫ সালে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশনে’র পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রথমে মেয়র আনিসুল হক এবং তার মৃত্যুর পর সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন। রাজধানীর বিশৃঙ্খল বাসকে ২২টি রুটে এবং ছয়টি কোম্পানির আওতায় এনে সুশৃঙ্খলভাবে কবে থেকে চালানো যাবে তা ‘বাস রুট রেশনালাইজেশনে’র পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কমিটির সদস্যরাও বলতে পারছেন না। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান কমিটির সদস্য সচিব। তিনি বলেছেন, তাত্ত্বিক সব কাজ তারা শেষ করেছেন।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আরামদায়ক ও নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় প্রাইভেটকার বেড়েই চলেছে। এটা কমাতে হলে বাস ও মেট্রো যোগাযোগকে উন্নত ও আরামদায়ক করতে হবে। তাহলে যাত্রীরা প্রাইভেটকার না কিনে বাস ও মেট্রোতে চড়বেন। প্রাইভেটকার কমাতে রাজধানীর দুটি সড়ক গাড়িমুক্ত রাখার ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। চার বছরেও তা কার্যকর হয়নি। মাসের প্রথম শুক্রবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ প্রাইভেটকার মুক্ত করার উদ্যোগ কয়েক মাস পরেই বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। করোনার কারণে এবার রাস্তায় কোনো অনুষ্ঠান হবে না। রচনা প্রতিযোগিতা ও ওয়েবিনারে সীমাবদ্ধ থাকবে কর্মসূচি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মজুমদারসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। এ বছর ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হাঁটা ও সাইকেলে ফিরি, বাসযোগ্য নগর গড়ি’। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীতে প্রায় তিন লাখ প্রাইভেটকার চলে। মোটরসাইকেলও দিন দিন বাড়ছে। তাই উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। মেট্রোরেল, বিআরটি এবং বাস রুট রেশনালাইজেশনের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Leave a Reply