1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ঝালকাঠি থেকে ১১ রুটে বাস চলাচল বন্ধ বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ১০ দেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হলেন স্টার লাইনের হাজী আলাউদ্দিন তরুণরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামুক আবার পেট্রোনাস লুব্রিক্যান্টস বিক্রি করবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ মন্ত্রী এমপিদের দেশত্যাগের হিড়িক : নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন অনেকেই বাস ড্রাইভার নিকোলাস মাদুরো আবারও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ইউএস-বাংলার দশম বর্ষপূর্তি : ২৪ এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে বিদেশে ২০ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী পরিবহন তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও আমাদের প্রস্তুতি

ড. মুহম্মদ মনিরুল হক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক
  • আপডেট : বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারে প্রথম, ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারে দ্বিতীয় এবং ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে তৃতীয় ধাপে ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে মানবসভ্যতার গতিপথে বিশাল পরিবর্তন হয়েছিল। এসব শিল্পবিপ্লবের ভিত্তিমূলের সঙ্গে নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে ব্যাপক পরিসরে দ্রুত বিকাশমান ডিজিটাল বিপ্লবকে বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন’ গ্রন্থের লেখক ও বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রফেসর ক্লস শোয়াবের চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে যখন বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ৪৬তম বার্ষিক সম্মেলনে আলোচনা হয়, তখন বাংলাদেশ বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার বিরাট অংশও তরুণ-কর্মক্ষম বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পর্যায়ে। তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সম্পর্কিত দূরদর্শী উদ্যোগ নেওয়ার সময় এখন বাংলাদেশের।

যন্ত্র বা প্রযুক্তি যখন কাজের বিকল্প হয় তখন কর্মক্ষেত্রে মানুষের চাহিদা কমে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে তৃতীয় বিশ্বের, বিশেষ করে স্বল্পপুঁজির রাষ্ট্রগুলোর চ্যালেঞ্জ অনেক বেড়ে যাবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ বিপ্লবের ফলে উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি বিরাট অংশ (বর্তমানে যাদের সম্পদ জনশক্তি) কর্মহীন হয়ে পড়বে। আবার বলা যায়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হবে প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ জনশক্তিসম্পন্ন রাষ্ট্রের জন্য বিশাল সম্ভাবনা, দক্ষতার মাধ্যমে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার অপার সুযোগ। সেই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের কী কী দক্ষতা অর্জন করানো প্রয়োজন তার প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। শিক্ষাক্রম হলো শিক্ষার মতো একটি পরিবর্তনশীল প্রপঞ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সুনির্দিষ্ট, সুপরিকল্পিত ও পূর্ণাঙ্গ পথনির্দেশ। একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষাক্রমে রাষ্ট্রের সমসাময়িক ও দূরদর্শিমূলক চাহিদা, নিজস্ব সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের কৌশল-পদ্ধতির উল্লেখ থাকে। আগামী দিনের সৃজনশীল, দ্রুত চিন্তার অধিকারী, সমস্যা সমাধানে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার পদ্ধতি থাকে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী প্রত্যাশিত শিক্ষাক্রম হলো পাঠ্যবইকেন্দ্রিক শিক্ষাক্রম চিন্তা থেকে বের হয়ে অ্যাক্টিভিটিনির্ভর এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া। মুখস্থের পরিবর্তে আত্মস্থ ও বিশ্নেষণ, সূত্রের চেয়ে নীতির বাস্তবিক প্রয়োগ। এ কারণে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে গুরুত্ব দিতে হবে বিদ্যমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের নতুন এবং মৌলিক জ্ঞান অর্জন ও বিকাশ ভাবনাকে। মাথায় রাখতে হবে ডিফারেনশিয়েটেড লার্নিং এবং কোলাবোরেটিভ লার্নিংয়ের ব্যবস্থা সম্পর্কে। ভাবতে হবে ফ্লিপ লার্নিং নিয়েও। অভূতপূর্ব পরিস্থিতি বা ভবিষ্যৎকেও চিন্তায় রাখতে হবে। আগের জ্ঞান অনেক সময় কাজে লাগবে না; তাই লার্ন, আন লার্ন এবং রি-লার্ন পদ্ধতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বর্তমানে বিদ্যমান শিখন শিক্ষণ কার্যক্রমের সঙ্গে ডিজিটালনির্ভর অন্যান্য ব্যবস্থা যেমন ই-লার্নিং এবং অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভাবতে হবে ট্রেড কোর্স/প্রফেশনাল কোর্স বা বিকল্প কোর্সের ব্যবস্থা নিয়ে। পরিকল্পনায় থাকতে হবে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষার সমন্বয় সাধনের বিষয়টি। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত সনদ-মানের সঙ্গে বৈশ্বিক সনদ-মানের সমন্বয়ের বিষয়টি। সাম্প্রতিক করোনা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বে নতুন করে বেকারত্ব বাড়ছে- অনেক বাংলাদেশিও কর্মহীন হবে। তাদের কাজে লাগানোর জন্যও ‘রিকগনিশন ফর প্রাইওর লার্নিং’-এর বিষয়টি মাথায় নিতে হবে। উপরন্তু ভবিষ্যতে এ জাতীয় মহামারিতে যেন শিক্ষার ব্যাঘাত না ঘটে সেই প্রেক্ষাপটও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো থিউরি নয়। এখন পর্যন্ত এটি একটি করপোরেট ভাবনার দৃশ্যপট। এ শিল্পবিপ্লব সফল হলে মানুষের চিন্তা, চেতনা, সুখ-দুঃখের চাহিদা বা প্রত্যাশিত অনেক কিছুরই ভার্চুয়াল বাস্তবায়ন ঘটবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু করপোরেট বাণিজ্যনির্ভর হওয়ার কারণে এর ফলে মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে এনে প্রযুক্তি বা রোবটের মাধ্যমে কতটা বাস্তব রূপ দেওয়া যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট ভাবনার আছে- বাস্তবায়নেও মতভেদ রয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনার আলোকে ২০১০ সালে সারাদেশে একযোগে চালু করা হয়েছিল সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র)। বর্তমানে ‘ই-গভর্ন্যান্স’ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক করোনা বিপর্যয়ে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু কাজ চলমান আছে। আশার কথা হলো, অনেক উন্নত রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশকে কৃষি বা খাদ্য সংকট তেমনভাবে মোকাবিলা করতে হয়নি। এমনকি গ্রামীণ সেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহনকেও করোনা সংকট ততটা বিপর্যস্ত করতে পারেনি। তাই আপদকালীন সময়ের বিবেচনায় হলেও যথাযথ, দেশীয়, খাঁটি, বাঙালিত্ববোধের সংস্কৃতি ও নৈতিক শিক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যেসব উপাদান বা ভিত্তিকে সামনে রেখে শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়, তার অন্যতম হলো জাতীয় শিক্ষানীতি। এ কারণে বর্তমান শিক্ষানীতির সংযোজন-পরিমার্জন বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করাও অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক  : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
dr.mmh.ju@gmail.com

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT