কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটনসেবায় যুক্ত হচ্ছে বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট, প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট, সুইমিং পুলসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ক্রুজ শিপ এমভি বে ওয়ান। দেশের খ্যাতনামা জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের অর্থায়নে আমদানি করা জাহাজটি বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করছে। প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিকতা শেষে অক্টোবর মাসের শেষ দিকে জাহাজটিতে পর্যটক পরিবহন শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অরগানাইজেশনের (আইএমও) রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সমুদ্রগামী তারকা মানের জাহাজ ‘বে ওয়ান’-এর ধারণক্ষমতা প্রায় দুই হাজার জন। ১২১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ৩ মিটার ড্রাফটের জাহাজটি সর্বোচ্চ ২৪ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে পারে। জাপানের কোবেই শহরের মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজে নির্মিত জাহাজটির আগের নাম ছিল ‘সালভিয়া মারু’। মালিকানা পরিবর্তনের পর এর নতুন নাম দেওয়া হয় ‘এমভি বে ওয়ান’।
কর্ণফুলী বিল্ডার্স সূত্র জানায়, জাপানের ইয়োকোহামা বন্দর থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি গত শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এরপর জাহাজটিকে নেওয়া হয় মেরিন একাডেমির পাশে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ডকইয়ার্ডে। বর্তমানে সেখানে জাহাজটিতে সংস্কারের কাজ চলছে। জাহাজটির সংস্কারকাজের তত্ত্বাবধানে থাকা কর্ণফুলী বিল্ডার্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ড্রাই ডক স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন কাজী মো. জাকারিয়া জানান, এমভি বে ওয়ান জাহাজে রয়েছে ৫৫০০ অশ্বশক্তির দুটি ইঞ্জিন, প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট, বাংকার বেড কেবিন, টুইন বেড কেবিন, চেয়ারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির দুই হাজার আসন এবং উত্তাল সমুদ্রে চলাচলের সক্ষমতা। সর্বোচ্চ ২৪ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম এটি। বর্তমানে জাহাজটিতে কিছু ডকুমেন্টেশন ও মেইনটেইন্যান্সের কাজ চলছে। জাহাজটিকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে। তবে এতে খুব বেশি কাজ নেই। আশা করছি অক্টোবরের শেষ দিকে জাহাজে পর্যটক পরিবহন শুরু করা যাবে।
তিনি জানান, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে গত বছর কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামে আরেকটি ক্রুজ শিপ চালু করা হলেও সেটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৫০০ জনের। আর ‘বে ওয়ান’-এর ধারণক্ষমতা দুই হাজার জনের। বাংলাদেশে এটি এখন সর্ববৃহৎ ক্রুজ শিপ বলে উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া জানান, কেবল অভ্যন্তরীণ রুটে নয়, আইএমওর রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত এ জাহাজ আন্তর্জাতিক রুটেও পরিচালনার সুযোগ রয়েছে।
এমভি বে ওয়ান-এর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (প্রশাসন) কামাল উদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে আমাদের অপর ক্রুজ শিপ কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের পাশাপাশি এমভি বে ওয়ান পর্যটক পরিবহনে পরিচালিত হবে। পরবর্তী সময়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অন্যান্য রুটেও পর্যটনসেবা সম্প্রসারিত হতে পারে। তিনি বলেন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটনসেবা প্রদানকারী অন্য জাহাজগুলো থেকে এমভি বে ওয়ান সম্পূর্ণ আলাদা। অত্যাধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বিলাসবহুল এ জাহাজে ভ্রমণের মাধ্যমে পর্যটকরা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১২১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ৩ মিটার ড্রাফটের এ জাহাজ সাধারণ জেটিতে বার্থিং নেওয়া সম্ভব নয়। তাই কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগরে জাহাজটির জন্য আলাদা জেটি নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে।
Leave a Reply