যখন আমাদের হৃত্প্রকোষ্ঠ কিংবা পাম্পিং চেম্বার দুর্বল কিংবা অনমনীয় হয়ে যায় তখন হৃত্স্পন্দন সমভাবে কাজ করতে পারে না। অনিয়মিত হৃত্স্পন্দনের সময় শরীর সচল রাখতে প্রয়োজনীয় রক্ত চলাচলে স্বাভাবিকতা বজায় থাকে না। এ সময় হৃৎপিণ্ড প্রাথমিকভাবে নিজেকে প্রসারিত করার চেষ্টা করে, যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। পেশিকে আরো শক্তিশালীভাবে প্রসারণের লক্ষ্যে হৃৎপিণ্ড গড় কম্পনের হার দ্রুত সচল রাখার চেষ্টা করে। প্রাথমিকভাবে হৃৎপিণ্ড এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানায়।
একটি সমস্যাপূর্ণ হৃৎপিণ্ডে খুব দ্রুত নেতিবাচক লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে—অল্প কাজেই শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, অবসাদ লাগে, পা ও গোড়ালি ফুলে যায়, ধারাবাহিকভাবে রক্তসহ কফ, পেট ফুলে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য এবং রাতের বেলায় প্রস্রাবের বেগ পাওয়া। হৃৎপিণ্ড কম কাজ করার প্রাথমিক লক্ষণ এগুলো। হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, মায়োকার্ডাইটিস কিংবা ভাল্ভ দুর্বল, কার্ডিওমায়োপ্যাথি কিংবা হার্টের পেশি নষ্ট হওয়া এবং বিভিন্ন ধরনের কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা হার্টের সমস্যার প্রাথমিক ভিত্তি। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস সমস্যা, নিদ্রাহীনতা, স্থূলতা এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ। হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হলে হৃৎপিণ্ডের ডান ও বাঁ পাশ কিংবা উভয় পাশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিটিরই ক্ষতিকর দিক রয়েছে এবং একইভাবে এগুলো মারাত্মক। সমস্যা জর্জরিত হৃৎপিণ্ড মানুষের লিভার বা কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে ডায়ালিসিস করানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
সুস্থ জীবনধারাই মানুষকে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। প্রতিনিয়ত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর ডায়েট, সেই সঙ্গে ধূমপান কিংবা অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকাই আমাদের হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখার আদর্শ পন্থা। যাঁরা এরই মধ্যে হৃৎপিণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য এই সমস্যার সমাধানে কার্ডিয়াক সিনক্রোনাইজেশন থেরাপি (সিআরটি) বেশ কার্যকর উপায়।
আমাদের হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠে ইলেকট্রিক্যাল সংকেত পাঠানোর জন্য সিআরটি পদ্ধতির আওতায় বাইভেনট্রিকুলার পেসমেকার ব্যবহার করা হয়। ভেনট্রিকুলার কন্ট্রাকশন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দক্ষভাবে সংকেতগুলো পরিচালনা করে। কার্ডিওভার্টার ডিফাইব্রিলেটরস ইলেকট্রিক্যাল শকের মাধ্যমে অস্বাভাবিক হৃত্স্পন্দনকে স্বাভাবিকতায় নিয়ে আসে।
সিআরটি হার্টের সমস্যা রয়েছে এমন সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যাদের মৃদু উপসর্গ কিংবা ডায়াস্টোলিক হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রযোজ্য নয়। সর্বোপরি প্রতিটি প্রযুক্তিভিত্তিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহারে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। তাই আমাদের জীবনের শুরুর দিনগুলো থেকেই জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি এড়াতে ইতিবাচক মনোভঙ্গি নিয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
লেখক : অধ্যাপক ও ইলেকট্রোফিজিওলজি অ্যান্ড হার্ট ফেইলিওর স্পেশালিস্ট, এভারকেয়ার হাসপাতাল||
Leave a Reply