1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
আগামীকাল থেকে বিরতিহীন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ শিপিং কর্পোরেশনের বহরে ২১টি জাহাজ যুক্ত হবে : নৌপ্রতিমন্ত্রী টাঙ্গাইলে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে দুর্বৃত্তের আগুন ‘দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আর থাকবে না’ কক্সবাজার-দোহাজারী রেল লাইন : প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন, শেষ হলো অপেক্ষা সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫% বাঁক ও ক্রসিংয়ে, বাঁক সোজা করার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির বঙ্গবন্ধু টানেলে রেসের ঘটনায় ৫ গাড়ি জব্দ : দুজন গ্রেপ্তার অক্টোবরে ৪২৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩৭ জন নিহত, ড্রাইভার মারা গেছে ১২০ জন : যাত্রী কল্যাণ সমিতি বিমানের কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে এমন অনেক ট্রাভেল এজেন্সির অস্তিত্ব নেই : প্রতিমন্ত্রী মেট্রো রেলে আধা ঘন্টায় উত্তরা থেকে মতিঝিল

দক্ষিণ আফ্রিকায় চার বছরে খুন হয়েছেন ৪৫২ বাংলাদেশি

আশরাফুজ্জামান মন্ডল
  • আপডেট : বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ধারদেনা করে আট বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা যান ফেনীর তাজুল ইসলাম রিপন (৩৬)। বৈধ কাগজপত্রের অভাবে দেশে ফিরতে পারছিলেন না। গত ২২ সেপ্টেম্বর বৈধ কাগজ হাতে পান। আনন্দে বাড়িতে ফোন করে বাবা-মাকে বিয়ের পাত্রী দেখতে বলেন। পাত্রী পেলে শিগগিরই বাড়িতে ফেরার কথাও জানান। কিন্তু ওইদিন রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার পুমালাঙ্গায় তার দোকানের দুই কর্মী (মালাওয়ের নাগরিক) কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে রিপনকে।

গত সোমবার ফেনীর ছাগলনাইয়ায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রিপনের বাবা আবুল বাশার কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরদিন মঙ্গলবার রিপনের মরদেহ দেশে ফেরার কথা। ছেলের শোকে রিপনের মা ও বড় ভাই পাগলপ্রায় হয়েছেন। গত আট দিন ধরে পরিবারটির ঘুম, খাওয়াদাওয়া উবে গেছে সে কথা বারবার বলছিলেন অসহায় আবুল বাশার।

রিপন যেদিন খুন হন ওইদিন দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক শহর প্রিটোরিয়ায় এক ভারতীয়র গুলিতে প্রাণ হারান নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আজাদ মিয়া (৫০)। জানা যায়, গাড়ি পার্কিং নিয়ে ওই ভারতীয়র সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছিল আজাদের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এ ঘটনায় বাংলাদেশিরা প্রত্যক্ষ করলেও কেউ সাহস করে মামলা করেননি। ফলে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেপ্তার হয়নি ওই ভারতীয়। এমনকি রিপন হত্যাকাণ্ডের কোনো মামলা হয়নি। ফলে গ্রেপ্তার নেই তার দুই খুনির।

বছরে মরছে ২০০ বাংলাদেশি, নির্বিকার দূতাবাস : সরকারি সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ’১৯ এই চার বছরে দক্ষিণ আফ্রিকায় খুন হয়েছেন ৪৫২ জন বাংলাদেশি। এ হিসাবে বছরে গড়ে ১০০ জনের ওপর বাংলাদেশি খুন হয়েছেন। তবে দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসীদের হিসাবে এ সংখ্যা বছরে দুই শতাধিক। ২০১৯ সালে ১৫০ বাংলাদেশি খুন হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় তিনজন করে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। যার বড় একটি অংশ ২০ থেকে ৩০ বছরের তরুণ। ২০১৯ সালে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ৫৬ বাংলাদেশি। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১৮টি। দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৫৩৩টি।

সম্প্রতি দেশটির জোহানেসবার্গ থেকে চারজন বাংলাদেশিকে অপহরণ করা হয়। তাদের তিনজন মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরলেও আবুল বাসার লাবলু নামে এক ব্যবসায়ীকে (৩৭) পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। টাকার জন্য নিয়মিত অপহরণের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। যারা অপহরণের শিকার হয়ে ফিরে আসেন তারা প্রাণভয়ে মুখ খোলেন না। প্রবাসীদের অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিদের ওপর এত নিপীড়ন চললেও বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা নেই বাংলাদেশ হাইকমিশনের। পাসপোর্ট নবায়ন, মৃত্যু সার্টিফিকেট প্রদান ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মধ্যে হাইকমিশনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। এমনকি বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকেও হত্যাকান্ড অপহরণের প্রতিবাদ করা হয় না। প্রাণভয়ে মামলায় কেউ বাদী হতে চায় না। এ সুযোগে বাংলাদেশিদের ওপর সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম বেড়ে গেছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে গেছেন নুরে হেলালী। তবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পালন করায় এখনো তিনি কাজে যোগ দেননি। ফলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হাইকমিশনের প্রথম সেক্রেটারি খালেদা বেগমের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কথা বলার ওপর সরকারি বিধিনিষেধ আছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তিনি এ প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে নুরুল আলম, হিমেল ও মোশাররফ নামে তিনজন প্রবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে নাম্বার পাঠান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা উইংয়ের মহাপরিচালক মালেকা পারভীন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে শুধু বাংলাদেশিরাই নয়, অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও দক্ষিণ আফ্রিকায় খুন হচ্ছে। হাইকমিশনের একার পক্ষে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে প্রবাসীদের সতর্কতা অনেক জরুরি।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় আগে আমাদের মিশন ছিল না। কিন্তু দেশটি থেকে প্রচুর রেমিট্যান্স আসে। ফলে সেখানে মিশন চালু করা হয়। প্রবাসীদের কল্যাণে যাতে ফরেন অফিসাররা আসেন সেজন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখানে তাদের পাঠানো উচিত।

বাংলাদেশি হত্যাকান্ডের নেপথ্যে : দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসীদের হিসাবে দেশটিতে বর্তমানে বাংলাদেশির সংখ্যা তিন লাখের বেশি। প্রবাসী সাংবাদিক ও কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানত চারটি কারণে দেশটিতে বাংলাদেশিরা হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে দেশটির সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নারীঘটিত কেলেঙ্কারি ও আইনি পদক্ষেপ না নেওয়া। জোহানেসবার্গ থেকে প্রবাসী সাংবাদিক নুরুল আলম টেলিফোনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, উচ্চ বেকারত্বের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ যুবক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস আসার পর এটি আরও বেড়ে গেছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে বড় দিন উপলক্ষে এদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যায়। যাদের সরল শিকারে পরিণত হন বিদেশি ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে লেনদেনগত সমস্যা হলে সন্ত্রাসী ভাড়া করে অন্যপক্ষকে হত্যা করে আরেকপক্ষ। এছাড়া দোকানের পাশে দোকান দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশিরা একপক্ষ আরেকপক্ষকে খুন করে থাকে বলে জানান নুরুল আলম। নারীঘটিত কেলেঙ্কারি আরেকটি বড় কারণ। এরপর রয়েছে হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া। নুরুল আলম বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় চীন, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের গায়ে আঘাত পড়লে সে দেশের সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। ওইসব দেশের কমিউনিটিগুলো শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু বাংলাদেশিরা খুন বা অপহৃত হলে আপনজনরাও মামলা করার সাহস পায় না। কমিউনিটি, হাইকমিশন কোনো উদ্যোগ নেয় না। ফলে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি মরছে।

প্রবাসী সাংবাদিক রুহুল আমিন খান বলেন, কেউ মামলা করে না কারণ সে জানে জামিন নিয়ে এসে সন্ত্রাসীরা তাকেও মেরে ফেলতে পারে। তাদের সঙ্গে যদি কমিউনিটি ও হাইকমিশন থাকত তাহলে সবাই সাহস পেত। আর এ দেশে মানুষ হত্যা মামলায় দু-তিন দিনের মধ্যে জামিন পাওয়া যায়। অথচ একটা কুকুর মারলে তিন মাসের আগে জামিন হয় না। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসীদের সংগঠন বাংলাদেশ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক বলেন, বিচার না হওয়ার পেছনে বড় কারণ আমরা মামলায় আগ্রহী নই। বিশেষ করে ভিকটিমরা এগিয়ে আসছে না। মামলা হলে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তাদের পাওয়া যায় না। ফলে শুধু বাংলাদেশিদের ওপর এ নির্যাতন চলছে। হাইকমিশন তো কোনো সহযোগিতাই করে না, তাদের কথা বলে লাভ নেই।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT