কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেকের অনুমোদনের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়নে কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্প পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব জাফর আলম বলেন,‘কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান জাপানের নিপ্পন কোয়ে কম্পানি আগামী ১০ মাসের মধ্যে প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইন জমা দেবে। এরপর দরপত্র ডেকে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করতে ২০২১ সালের শেষ দিক পর্যন্ত সময় লাগবে। আমরা চাই ২০২১ সালেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। আমরা চাইব ২০২৫ সালের মধ্যেই প্রথম ধাপের বন্দর নির্মাণ শেষ করতে।’
চট্টগ্রাম বন্দর সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সাড়ে ৯ মিটারের বড় গভীরতার (ড্রাফট) এবং ১৯০ মিটারের বেশি দীর্ঘ জাহাজ ভিড়তে পারে না। তখন ১৬ মিটার গভীরতার এবং আড়াই শ মিটার দীর্ঘ জাহাজ মোট আট হাজার একক কনটেইনার পণ্য নিয়ে ভিড়তে পারবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কারণে বড় জাহাজ বা মাদার ভেসেল জেটিতে ভিড়তে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার বা ছোট জাহাজে কনটেইনারভর্তি রপ্তানি পণ্য নিয়ে প্রথমে সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং, কলম্বো ও তানজুম পেলিপাস বন্দর হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় যেতে হচ্ছে। তখন ইউরোপের যেকোনো বন্দর থেকে সরাসরি জাহাজ মাতারবাড়ীতে ভিড়তে পারবে। আর মাতারবাড়ী থেকে যেকোনো জাহাজ পণ্য নিয়ে আমেরিকার কোনো বন্দরে যেতে পারবে। এটা বলতে ছোট হলেও বিশাল অর্জন হবে।
তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ী বন্দর থেকে ছোট ফিডার জাহাজে কনটেইনার পণ্য সাগর-নদীপথে মোংলা, পায়রা বন্দর পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে পরিবহন হবে। আর সড়কপথে মাতারবাড়ী থেকে চকরিয়া হয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছতে পারবে। এ জন্য মাতারবাড়ী-চকরিয়া ২৭ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। শুধু তাই নয়, মাতারবাড়ীর সঙ্গে চকরিয়া পর্যন্ত রেল সংযোগ নির্মিত হবে; যেটি কক্সবাজার-দোহাজারী-চট্টগ্রাম ডুয়াল রেললাইনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। আমরা বহুমুখী যোগাযোগের সব ব্যবস্থাই রাখছি; যাতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ি।’
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের ডিটেইল ডিজাইন তৈরি, জেটি ও ইয়ার্ড ডিজাইন তৈরি করা এবং প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কেও তারা প্রতিবেদন দেবে। এরপর প্রকল্পের দরপত্র ডকুমেন্ট তৈরি, যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন তৈরি। ঠিকাদার নিয়োগ এবং সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শেষ করেও এক বছর প্রকল্পের কারিগরি দিক তদারকি করবে। এ জন্য কনসালট্যান্ট খরচ হচ্ছে মোট ২৩৪ কোটি টাকা।
টাকা কোত্থেকে আসবে জানতে চাইলে জাফর আলম বলেন, ‘জাপান আমাদের কনসালট্যান্সি খরচ বাবদ পুরো টাকাই দশমিক ১ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে দেবে। ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডের পর পরবর্তী ২০ বছরে আমরা ঋণের টাকাটা পরিশোধ করব।’
Leave a Reply