রাজশাহীতে রাতের আঁধারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পুকুর ভরাট করেছেন প্রভাবশালীরা। জেলার কেশরহাট পৌরসভা সদরে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, কেশরহাট পৌরসভা মেয়রের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহল সড়ক ও জনপথের প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের তিন বিঘার একটি পুকুরের অর্ধেক মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। সড়ক ও জনপথের জায়গায় ছোট ব্যবসায়ীদের সরিয়ে প্রভাবশালীরা দখল নিয়ে মার্কেট নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে পুকুর ভরাট বন্ধের প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীরা রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, মোহনপুর থানার ওসি এবং পৌরসভার মেয়রসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুকুর ভরাট বন্ধে কোনো দফতরই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন জানান, গত বছরের মার্চে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয়। সে সময় মহাসড়ক সংলগ্ন ওই পুকুরটির ধারে ১০-১২ জন ছোট ব্যবসায়ীর দোকান ছিল। মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য তাদের নোটিশ দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। গত ডিসেম্বরে মহাসড়কটির প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হয়। এরপর পূর্বে যাদের দোকান ছিল তারা সেখানে দোকান নির্মাণ করতে গেলে প্রভাবশালীরা বাধা দেয় এবং নিজেদের জায়গা বলে দাবি করে।
পূর্বে ওই স্থানের দোকান মালিক মোস্তফা কামাল জানান, কেশরহাট পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আলী, কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, বাকশইল মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান, কেশরহাট পৌরসভা সদরের ফজলুর রহমানসহ কয়েকজন প্রভাবশালী এক সপ্তাহ থেকে রাতের আঁধারে বালু ভরাট করে পুকুরের অর্ধেক দখল করে নিয়েছে। ভরাট বন্ধে কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামানের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করা হলেও তিনি নিশ্চুপ রয়েছেন।
তবে পুকুর ভরাটে সহযোগিতা করা এবং নিশ্চুপ থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেয়র শহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আর পুকুর ভরাটে কাউকে সহযোগিতা করার অভিযোগও সঠিক না। এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কিনা- সেটিও আমার মনে নেই।
কেশরহাট পৌরসভার নারী কাউন্সিলর কহিনুর বিবি বলেন, কিছু গরিব মানুষ মহাসড়কের ধারে ছোট দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করতেন কিন্তু তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে করোনার এ সময়ে বেকার হয়ে অনেক কষ্টে আছেন। ইতোমধ্যে রাতে আঁধারে দেড় বিঘা পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এ পরিমাণ জমির দাম স্থানীয় বাজারে প্রায় তিন কোটি টাকা। আমরা পুকুর ভরাট অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছোট ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।
মঙ্গলবার সকালে পুকুর ভরাটের স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরটির প্রায় অর্ধেক ভরাট হয়ে গেছে। ভরাট করা জায়গায় বাঁশ পুঁতে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। দখলকারীরা কে কোন জায়গাটি নেবেন তা ভাগাভাগি করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, রাতের আঁধারে ট্রাকের পর ট্রাক দিয়ে বালু ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। অচিরেই এখানে বড় মার্কেট নির্মাণ করা হবে। কেশরহাট এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবের আলী। তার বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা দখলের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পুকুর ভরাটের ব্যাপারে তিনি বলেন, পুকুরের পেছনে আমার জমি আছে। এ কারণে ভরাট করছি। ভরাটের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কিনা- এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বলেছেন, সওজ নিষেধ করলে পুকুর ভরাট করব না।
পুকুর ভরাটের ব্যাপারে কাউন্সিলর সাবের আলীর অন্যতম সহযোগী কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম দাম্ভিকতা প্রকাশ করেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা পুকুর ভরাট করি আর না করি এ ব্যাপারে আপনি কেন প্রশ্ন করবেন। আর পুকুর ভরাটের সঙ্গে আমি যুক্ত থাকতেই পারি, তাতে আপনার কিছু করার নেই। পুকুর ভরাট করছি, সেটা করব- এটি অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে সওজ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা বলেন, দখলকারীদের লিখিতভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও রাতের আঁধারে ভরাট করছে। এদের উচ্ছেদ করা হবে। এদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply