এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিনে বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রাসেলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার সামসুল হক রেজা ও জহির উদ্দিন লিমন। গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও মো. সাইফুল আলম।
রায়ের পর গ্রিনলাইনের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আগে রাসেল সরকারকে ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়েছি। আদালত আরও ২০ লাখ টাকা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা গ্রিনলাইন মালিকের সঙ্গে আলাপ করে এ ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হওয়ার পর আদালত আদেশ দিয়েছেন। এটা সর্বসম্মতিক্রমে একটি রায়। এ কারণে গ্রিনলাইনের পক্ষে আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো না।
তিনি আরও বলেন, আদালত বললেন আপনারা একটা সম্মত অর্থের পরিমাণ বলেন। আমি আদালতকে বললাম আগে প্রায় ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা দিয়েছি। এর বাইরে আমি ১৫ লাখ টাকার কথা বলেছিলাম। তখন আদালত বললেন-১৫ লাখ টাকা রাজি হলে বাড়িয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেবেন। তিন মাসের মধ্যে আদালত এ টাকা দিতে বলেছেন। মোটামুটি একটা সম্মত রায়। মানবিক কারণে আমরা সম্মত হয়েছি। যেহেতু সে পা হারিয়েছে। তাকে একটা ক্ষতিপূরণ দেয়া দরকার।
এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আজকের দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে ওইদিন রাসেলের পক্ষে ছিলেন খন্দকার সামসুল হক রেজা। গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।
গত ৫ মার্চ এ মামলায় ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য যে কোনো দিন অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন আদালত। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মো. হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের ধাক্কায় প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ঘটনায় গাইবান্ধার একই এলাকার বাসিন্দা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য (বর্তমানে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক) অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে রিট করেন।
হাইকোর্ট ওই বছরের ১৪ মে এ বিষয়ে রুল জারি করেন। রুলে কেন রাসেলকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। পরে আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এক আদেশে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। প্রতিমাসে পাঁচ লাখ টাকা করে দিতে বলা হয়। এই নির্দেশের পর এ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ।
গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে প্রয়োজন হলে তার পায়ে অস্ত্রোপচার এবং কাটা যাওয়া বাম পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচ দিতে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। এর অগ্রগতি হলফনামা আকারে ৩১ মার্চের মধ্যে আদালতে দাখিল করতেও বলা হয়। তবে হাইকোর্টের ১২ মার্চের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগ আবেদন করে, যা ৩১ মার্চ খারিজ হয়। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে।
Leave a Reply