ইকোট্যুরিজম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন সংকট নিরসনে ১২ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)। শুক্রবার সকালে কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলনে এ সব প্রস্তাবনা তুলে ধরে তারা।
প্রস্তাবনাগুলো হলো- সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে বিকল্প পণ্যের ব্যবহার ও সরবরাহ নিশ্চিত করা, দ্বীপের ভাঙন রোধে মূল ভূখণ্ড থেকে ৫০০ মিটার দীর্ঘ আধুনিক জেটি তৈরি, পরিবেশ অধিদপ্তরের ইকো হোটেল, মোটেল, হোম স্টে মডেল তৈরি ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া, দ্বীপে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা ও জেনারেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, দ্বীপের একটি অংশকে জীব বৈচিত্র্যের জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা, ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে একটি নির্ধারিত স্থানে রাখা ও অপচনশীল আবর্জনা দেশের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা, প্লাস্টিক ফ্রি সেন্টমার্টিন ঘোষণা করা, ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগের পরিবর্তে কেয়াবন, নারকেল গাছ ও ঝাউ বাগান তৈরি করা, দ্বীপের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল এসটিপি বাস্তবায়নের প্রকল্প গ্রহণ করা, প্রবাল প্রাচীর সুরক্ষা ও প্রবাল পাথরের স্তর বৃদ্ধিতে দেশি-বিদেশি বৈজ্ঞানিকদের নিয়ে গবেষণা চালানো, আন্ডারওয়াটার নেচার সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ ও সমুদ্র তলদেশের প্রবাল উত্তোলন ও মৎস্য প্রজননে ব্যাঘাত হয় এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা এবং ব্লু ইকোনমিতে মেরিন ট্যুরিজম বিকশিত করতে দ্বীপকে রেসপনসিবল ইকোট্যুরিজম মডেল হিসেবে গড়ে তোলা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে পর্যটনশিল্প ও স্থানীয় জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে। জীবিকা হারাবে স্থানীয় বাসিন্দারা। ঝুঁকিতে পড়বে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান হারাবে পর্যটনশিল্পে নিয়োজিত লক্ষাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এ সব কারণে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত সীমিতকরণের সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায় টুয়াক। বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে টুয়াক।
সংবাদ সম্মেলনে টুয়াক জানায়, অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১ হাজার ২৫০ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে, বাংলাদেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হবে দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা। এতে সেন্টমার্টিনকে কেন্দ্র করে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত সাত মাস কোভিড-১৯ এর প্রভাবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায়, পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি। এ অবস্থায়, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে সার্বিক পর্যটনশিল্পে ধ্বস নামবে বলা জানায় টুয়াক।
এসব বিবেচনায় সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনটি দাবি তুলে ধরে টুয়াক। দাবিগুলো হলো- আগামী পাঁচ বছর পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ অব্যাহত রাখতে হবে, দেশি পর্যটকদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করা ও কোনো প্রকার সেবা/ভ্রমণ চার্জ আরোপ না করা, শুধু বিদেশি পর্যটকদের নিবন্ধনের আওতায় আনা ও বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে সেবা/ভ্রমণ চার্জ আরোপ করা, টুয়াকের গৃহীত ‘প্লাস্টিক ফ্রি ইকোট্যুরিজম, কক্সবাজার’ নামক প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়িত করার অনুমোদন ও সহায়তা প্রদান করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন টুয়াকের সভাপতি তোফায়েল আহমদ। এ ছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন কমিটির উপদেষ্টা মফিজুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার কামাল, সহ-সভাপতি হোসাইন ইসলাম বাহাদুর, সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলা আশেক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আজম প্রমুখ।
সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিনিধি, কোষ্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিজিবি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও টুয়াকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ, রাত্রিযাপন নিষিদ্ধকরণ, চার্জ আরোপ ও নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় টুয়াকের পক্ষ থেকে।
Leave a Reply