করোনাভাইরাসের ছোবলে গত পাঁচ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনেছে বাংলাদেশ বিমান। স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিক ও চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে অল্প-স্বল্প আয় হলেও মাসে নিট খরচ গুনতে হচ্ছে ৬২৮ কোটি টাকা। নতুন করে ঋণ নিয়ে পুরান ঋণের কিস্তি শোধ করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমডি এবং সিইও মোকাব্বির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এখন চলতে হচ্ছে ঋণ করে। আমরা যে এয়ারক্রাফট কিনেছি তার ব্যাংক ঋণের কিস্তি, ইন্স্যুরেন্সের খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ গুনতেই হচ্ছে। তার ওপরে যদি আবার অপারেটিং লস হয় তাহলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। অন্য খাতে বন্ধ থাকলে আয় না হলেও অন্তত ব্যয় হয় না। কিন্তু এভিয়েশন খাতে আয় না হলেও মাসে বিপুল পরিমাণ ব্যয় হয়ে যায়। বিশ্বব্যাপী পর্যটন চালু না হলে এভিয়েশন খাতের ক্ষতি সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে।’
জানা যায়, করোনার প্রকোপে বিশ্বজুড়ে এভিয়েশন খাতে নেমে এসেছে বিপর্যয়। সারা বিশ্বে বিমান চলাচল কমেছে ৮০ শতাংশ। জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প পরিসরে কিছু ফ্লাইট পরিচালনা করলেও আয়ের তুলনায় তা অনেক বেশি। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমেই উড়োজাহাজ চলাচলের ওপরে বিধিনিষেধ আরোপ হয়। বন্ধ হতে থাকে চীনের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। মার্চ মাসের মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। লকডাউন শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। সব পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় দেশের সীমান্ত। এতে একেবারে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয় এয়ারলাইনসগুলোকে। কিছু চার্টার্ড ফ্লাইট, কার্গো ছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বন্ধ হয়ে যায় উড়োজাহাজ চলাচল। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে এভিয়েশন খাত। এয়ারলাইনসগুলোকে নিয়মিত যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে, উড়োজাহাজগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে হচ্ছে। এগুলো বাবদ খরচ গুনতে হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলোতে। এ ছাড়া ইন্স্যুরেন্সের মোটা অঙ্কের কিস্তি তো আছেই। ক্ষতির তালিকায় রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা যায়, বিমানের মাসিক স্থায়ী পরিচালন ব্যয় ২০৩ কোটি টাকা, উড়োজাহাজ ক্রয়ের কিস্তি ৬১ কোটি টাকা, উড়োজাহাজ ভাড়ার কিস্তি ৯৮ কোটি টাকা, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ২৬৬ কোটি টাকা। মাসে নিট খরচ ৬২৮ কোটি টাকা। পাঁচ মাসে আয় হোক আর না হোক খরচ গুনতে হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। গত জুলাই-আগস্ট মাসে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ২৩৫ কোটি টাকা আয় করেছে বিমান। আয়ের বিপরীতে অপারেটিং লস হয়েছে ২৫৭ কোটি টাকা। পুরান ঋণের কিস্তি টানতে সরকারি ব্যাংক থেকে আরও ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সংস্থাটি।
এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভিয়েশন খাতে ৫০ শতাংশ আয় আসে পর্যটন থেকে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশগুলো। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে পর্যটন চালু হতে এখনো সময়ের ব্যাপার। ইউরোপজুড়ে চলছে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের হার। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। কিছু কিছু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় অভ্যন্তরীণ পর্যটন চালু হতে শুরু করেছে। কিন্তু দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। জরুরি প্রয়োজনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। ফলে ধীরে ধীরে ফ্লাইট বাড়াতে শুরু করেছে এয়ারলাইনসগুলো। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ১৬টি রুটের মধ্যে লন্ডন, আবুধাবি, দুবাই, কুয়ালালামপুর, গুয়াংজু, হংকং, রিয়াদ, জেদ্দা, মাসকাট, দাম্মাম ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে। এ ছাড়াও বিমান বর্তমানে বিভিন্ন রুটে বিশেষ ও কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমান বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটে প্রতি সপ্তাহে দুটির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ক্ষতি কাটিয়ে ফ্লাইট বাড়ানোয় জোর দিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ প্রতিদিন।
Leave a Reply