কর্মস্থলে ফিরতে বিমানের টিকিট দরকার তাদের। টিকিটপ্রত্যাশীরা তাদের এ চাওয়া পূরণে কতটা মরিয়া তা বলে দেয় মধ্যরাতে সোনারগাঁও হোটেল ঘিরে হাজার হাজার প্রবাসী কর্মীর ভিড়। হোটেলের পাশে ফুটপাথে এবং পেছনে হাতিরঝিলে ওয়াকওয়েতে পলিথিন বিছিয়ে রাতভর বিনিদ্র সময় কাটাচ্ছেন তারা।
আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে টিকিটপ্রত্যাশীদের টোকেন দেবে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স। শুক্রবার দুপুর থেকেই তার জন্য লাইন ধরেছেন ছুটিতে দেশে এসে করোনায় আটকেপড়া সৌদিপ্রবাসীরা। তখন লাইন ছিল শখানেক মানুষের। শনিবার দুপুরেও বড়জোর দুই-তিনশ প্রবাসী ছিলেন। সন্ধ্যার পর চিত্র বদলাতে শুরু করে। জনসভার মতো ভিড় জমে। রাত ১২টা নাগাদ অন্তত চার-পাঁচ হাজার কর্মী ভিড় করেন হোটেল ঘিরে। তাদের একটিই চাওয়া- সৌদি যাওয়ার টিকিটের টোকেন।
সৌদি এয়ারলাইন্সের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৮টা থেকে তিন ঘণ্টা টোকেন দেওয়া হবে। এ হিসাবে বড়জোর দেড়- দুই হাজার মানুষ টোকেন পাবেন। বাকিদের হয়তো খালি হাতেই ফিরতে হবে। তবু আশায় ভর করেই হাজারো কর্মী গ্রামগঞ্জ থেকে এসেছেন টিকিটের খোঁজে।
টোকেন পেলেই টিকিট পাওয়া যাবে- এ নিশ্চয়তা নেই। টিকিট পেতে ভিসা ও আকামার মেয়াদ থাকতে হবে। ছুটির শেষ সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজে না ফেরায় থাকতে হবে নিয়োগকর্তার (কফিল) সম্মতিপত্র। এগুলোর কিছুই নেই গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাড়ৈতলা গ্রামের মো. ইব্রাহিমের। তার ভিসা ও আকামার মেয়াদ শেষ ৩০ সেপ্টেম্বর। মেয়াদ বাড়াতে কফিলকে অনুরোধ করেছেন। এখনও বাড়েনি। কফিল ১০ হাজার রিয়াল (দুই লাখ ২০ হাজার টাকা) দাবি করেছেন।
তার পরও ইব্রাহিম এসেছেন। কারণ, টোকেন পেলে কফিলকে বলেকয়ে আকামা ও ছুটি নবায়ন করাতে চেষ্টা করবেন। তারপর টিকিট পেলে বিমান ধরবেন। টোকেনের অপেক্ষায় ইব্রাহিম মধ্য রাতে হাতিরঝিলের ওয়েকওয়ের পাশে ঘাসের ওপর ৫০ টাকায় কেনা এক টুকরো পলিথিন বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। জানালেন, দুই রাত ধরে আছেন। খুব কষ্ট হচ্ছে। খাওয়া-গোসল বাদ দিয়ে পড়ে আছেন। তার পরও আছেন। কারণ, ঘরে অভাব। দেশে বসে গত ছয় মাসে সব সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছেন। তাকে কাজে যেতেই হবে।
এই ভিড়ে নারীরাও রয়েছেন। দুই সন্তানের মা লক্ষ্মীপুরের রামগতির আদুরী বেগম তাদের একজন। তিনিও রাতের ভয় ভুলে টোকেনপ্রত্যাশীর ভিড়ে ঝাঁপ দিয়েছেন। খাওয়া-দাওয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে তাকে প্রবাসের কর্মস্থলে ফিরতেই হবে। আদুরী বেগম কফিলকে অনুরোধ করে ছুটি বাড়িয়েছেন এক মাস। মালিক বলে দিয়েছেন, এর মধ্যে ফিরতে না পারলে সে অন্য লোক দেখে নেবে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের নজরুল ইসলামেরও ভিসা ও আকামার মেয়াদ বেড়েছে। কিন্তু তিনিও মরিয়া। কারণ, তাকেও কফিল বলে দিয়েছে নির্ধারিত সময়ে ফিরতে না পারলে আসার দরকার নেই। তাই ঘর ছেড়ে টোকেনের আশায় পথে নেমেছেন। হাতিরঝিলে মশার কামড় খেয়ে রাত কাটাচ্ছেন তিনিও।
Leave a Reply