হেঁটে ২০ হাজার মাইল! শুনতে অবাক লাগলেও ক্যারেন পেনি নামের এক স্বেচ্ছাসেবী চার বছরের কম সময়ে ২০ হাজার মাইল উপকূলবর্তী পথ পাড়ি দেওয়ার সংকল্প করেছেন। যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডের উপকূল ঘিরে প্রায় ৩২ হাজার কিলোমিটার হেঁটে অতিক্রম করবেন যুক্তরাজ্যের এ নারী। সড়কে, পাহাড়ে, উপকূলে, বাগানে রাত কাটিয়ে প্রতিদিন এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হাঁটছেন তিনি। এ যাত্রায় অন্তত ২০টি বড় দ্বীপপুঞ্জ পাড়ি দিতে হবে তাকে। যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ডিমেনশিয়া দাতা সংস্থাকে সাহায্যের জন্য অনুপ্রাণিত হয়ে এবং রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে তিনি এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। পেনির উদ্দেশ্য দিনে অন্তত ২৪ কিলোমিটার হাঁটা, আলঝেইমার রিসার্চ ইউকের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।
অবসর নেওয়ার আগে তিনি ৩০ বছর আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পেনির শ্বশুর-শাশুড়ি দু’জনেই ডিমেনশিয়া সম্পর্কিত রোগে ভুগে মারা যান, যা তার জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। এ অভিযাত্রা চলাকালীন তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মার্ক ফকনার, ক্যাম্পার ভ্যানে প্রতি ছয় সপ্তাহের মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করেন। ফকনার স্ত্রীর এ রোমাঞ্চকর যাত্রা সম্পর্কে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি দুর্দান্ত, আমি জানি সে এটি করতে পারবে’।
৫৩ বছর বয়সী ক্যারেন পেনি এ যাত্রায় হালকা ওজনের একটি তাঁবু নেন। স্লিপিং ব্যাগ, পানি, পোশাক, খাবারসহ প্রায় ১৭ কেজি ওজনের একটি ব্যাকপ্যাক তার নিত্যসঙ্গী হিসেবে আছে। গত বছর ১৪ জানুয়ারি সাউথগেট থেকে ওয়েলস উপকূল হয়ে আয়ারল্যান্ডের ফিসগার্ডের উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। যুক্তরাজ্যের পেনার্ড প্রাইমারি স্কুল থেকে তার যাত্রা শুরু হয় এবং এই যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এই পদযাত্রা শেষ করার আশাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
১৩ মাস যাত্রা শেষে অপ্রত্যাশিতভাবে করোনাভাইরাস মাহামারির ফলে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এর আগে শিটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত ভ্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। করোনাকালীন লকডাউনে ঘরে ফিরেও তিনি বিশ্রাম নেননি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে আবার চ্যালেঞ্জটি শুরু করেন। সব বাধা মোকাবিলা করে বাকি পথ পাড়ি দিতে যাত্রা শুরু করেন। ইতোমধ্যে তিনি আলঝেইমার রিসার্চ ইউকের গবেষণার জন্য ৬৩ হাজার পাউন্ডের বেশি অর্থ জোগাড় করেছেন। গণমাধ্যমকে পেনি বলেন, আমার পদচারণায় অনেক বিস্ময়কর মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে, যারা আলঝেইমার রিসার্চ ইউকেকে আমার মতোই সাহায্য করতে আগ্রহী। দুঃখের বিষয়, দু’জনের মধ্যে একজন এমন কাউকে চেনেন যিনি স্মৃতিভ্রংশ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাই আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানে লোকদের সঙ্গে তাদের গল্প ভাগ করে নিয়েছি।
তিনি জাস্টগিভিং ওয়েবসাইটে লেখেন, এর আগে ম্যারাথনে অংশ নিয়ে ৬০০০ পাউন্ড আদায় করেছিলাম। আলঝেইমার রিসার্চ ইউকের জন্য ১ লাখ পাউন্ড সংগ্রহ করতে আমি এখন পরিবার, বন্ধু এবং আমার প্রিয় বিড়াল বিলবোকে পেছনে ফেলে জীবনের পরবর্তী ৪ বছর উৎসর্গ করেছি। ২০১৭ সালে আলঝেইমার এবং অন্যান্য ডিমেনশিয়ায় যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে ওঠে। এটি থামাতে এবং নিরাময়ের কোনো চিকিৎসা না থাকায় মৃত্যুর হারও বেশি।
Leave a Reply