আশুগঞ্জ-ধরখার-আখাউড়া সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। ভারতীয় নমনীয় ঋণ সহায়তাভুক্ত (এলওসি-২) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত জানুয়ারিতে ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। চুক্তি হলেও জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় কাজ শুরু করতে পারছেন না ঠিকাদার। প্রকল্প এলাকায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জমি নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় তা বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।
সওজ অধিদপ্তরের জন্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় প্রকল্পটিও (এলওসি) চলছে ধীরগতিতে।২৫টি প্যাকেজের আওতায় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের জুনে। তবে ধীরগতির কারণে এ মেয়াদে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
এলওসি-৩-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির ডিপিপিই চূড়ান্ত করতে পারেনি সওজ অধিদপ্তর। মহাসড়কটির ডিজাইন রিভিউ করতেই অনেক বেশি সময় লেগে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরাই।
একইভাবে বিবিরবাজার-সুয়াগাজী সড়কটি চার লেনে উন্নীত হওয়ার কথা এলওসি-৩-এর মাধ্যমে। তবে ভাটিয়াপাড়া-বেনাপোলের মতোই এ মহাসড়কটি নির্মাণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিটি এখনো প্রস্তুত করতে পারেনি সওজ অধিদপ্তর। অন্যদিকে বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো সাবরাং মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হলেও বিলম্বিত হচ্ছে দরপত্র আহ্বানের কাজ।
এলওসির আওতায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) জন্য বাস-ট্রাক সংগ্রহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ভারত থেকে এরই মধ্যে প্রকল্পের জন্য সব বাস ও ট্রাক দেশে এসে পৌঁছলেও বেনাপোল বন্দরে বেশ কিছুদিন ধরে আটকে আছে বিভিন্ন স্পেয়ার পার্টস। ফলে এখনো ঝুলে আছে প্রকল্পটি। এ প্রকল্পটি এলসি-২ এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দুটি সংস্থা সওজ অধিদপ্তর ও বিআরটিসি এলওসির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে কিংবা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এলওসি-১-এ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল। সেই প্রকল্পে বিআরটিসির জন্য কেনা হয়েছিল ৪২৮টি ডাবল ডেকার, সিঙ্গেল ডেকার এসি বাস ও আর্টিকুলেটেড বাস। যদিও কেনার পর পরই বাসগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এলওসি-২-এর আওতায় গ্রহণ করা হয় চারটি প্রকল্প। এর মধ্যে দুটির কাজ বা প্রকিউরমেন্ট শেষ। বাকি দুটি এখনো চলমান। আর এলওসি-৩-এর আওতায় বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ও প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলো নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ধীরগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এলওসির আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বেশি সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এ সময় তিনি এলওসির আওতায় বাস্তবায়নাধীন সবকয়টি প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করার জন্য সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এ নির্দেশনার পর আগামীকাল ফের এলওসির আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর ওপর অগ্রগতিসংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এ সভায়।
Leave a Reply