গাড়ির ড্রাইভারের জন্য সাধারণত গতিসীমা অতিক্রম করাকেই বড় ধরণের আইনের লংঘন বলে ধরা হয়। পাশাপাশি ভুলে লেনে চলা, ভুল স্থানে পার্কিং, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোকেও প্রায় সব দেশেই বেআইনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কিছু কিছু দেশে অদ্ভূত সব আইন আছে। যেমন গাড়িতে আলু বহন করা যাবে না! ট্র্যাফিক সিগন্যাল ভঙ্গ করলেই ছয় মাসের জেল! স্টিয়ারিং হুইলে দুই হাত রাখা! এমনই আরও অনেক অদ্ভূত আইন আছে। এসব নিয়েই এই প্রতিবেদন।
১০ ফুট দূরে গেলেই গাড়ি তালাবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক
নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম শহর নিউ সাউথ ওয়েলস। এই শহরে গাড়ি চালকদের জন্য অদ্ভূত এক আইন আছে। গাড়ি ছেড়ে দশ ফুট দূরে যেতে হলে অবশ্যই তালাবদ্ধ করে যেতে হবে। এমনকি গাড়ির উইন্ডো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সর্বোচ্চ এক ইঞ্চির চার ভাগের তিন ভাগ পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে! অবশ্য যেসব গাড়ির উইন্ডো নেই সেগুলোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
আলু বহনের অনুমতি নিতে হয়
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৪৬ সালে এক আইন তৈরী হয়। আলু বাজারজাতকরণ কর্পোরেশন অথবা তাদের নিযুক্ত এজেন্ট ছাড়া অন্য কেউ গাড়িতে ১১০ পাউন্ডের (প্রায় পঞ্চাশ কেজি) বেশি আলু বহন করতে পারবে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্য যদি অনুমান করে ধরে নেয় এর বেশি আলু আছে তবেই বিপত্তি! উচ্চ হারে জরিমানা গুনতে হবে। অবশ্য বর্তমানে এই আইন সাধারণত প্রয়োগ করা হয় না। গত শতকের চল্লিশের দশকে মূলত আলু যেনো সাধারণ মানুষ স্টক করে রাখতে না পারে সেজন্যই এমন আইন করা হয়েছিল।
ট্র্যাফিক আইন অমান্য করলেই ছয় মাসের জেল
বাহরাইন
বাহরাইনে যে কোনো ধরণের ট্র্যাফিক আইন অমান্য করলেই ছয় মাসের জেল দিতে পারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। লাল বাতির সিগন্যাল ভঙ্গ করলেই কঠোর শাস্তি নেমে আসে সেখানে। ৫০০ দিনার (প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার টাকা) জরিমানাও গুনতে হয়। তাছাড়া লাল বাতির সিগন্যাল ভেঙ্গে কোনো সম্পত্তি নষ্ট করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ৩০০০ দিনার (প্রায় ছয় লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা) জরিমানা গুনতে হয়। ভয়াবহ এমন শাস্তির কারণেই বাহরাইনের মানুষ আইন ভাঙার সাহস করে না।
গাড়িতে খাবার নিষেধ
সাইপ্রাস
মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো সব দেশেই নিষেধ। কিন্তু এমন এক দেশ আছে যেখানে গাড়ি চালানো অবস্থায় পানি পান করাও নিষেধ। দেশটির নাম সাইপ্রাস। সেখানে ড্রাইভারের জন্য দুই হাত স্টিয়ারিং হুইলে থাকা বাধ্যতামূলক। একটা হাত সরালেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সেই ড্রাইভারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। সাইপ্রাসে আরও একটা অদ্ভূত আইন আছে। দিন রাত সব সময়ই সেখানে হেডলাইট অন রাখতে হয়।
অ্যালকোহল পরিমাপের যন্ত্র সাথে রাখ
ফ্রান্স
ব্রেথালাইজার (অ্যালকোহল পরিমাপের যন্ত্র)। প্রায় সব দেশেই এটা ব্যবহার করা হয় গাড়ির চালক মদ্যপ কি না তা নির্ণয় করার জন্য। সাধারণত ট্র্যাফিক পুলিশের কাছেই এই যন্ত্র থাকে। তবে ব্যতিক্রম হলো ফ্রান্স। সেখানে একজন ড্রাইভারকে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে ব্রেথালাইজার। যদি সঙ্গে না রাখে তাহলে ১১ ইউরো (প্রায় ১১শত টাকা) জরিমানা গুনতে হবে। ২০১৩ সাল থেকে এই আইন পাশ হয়েছে ফ্রান্সে।
লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালান
ফ্রান্স
মানুষের অধিকারকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় এমন দেশ ফ্রান্স। সেই দেশে অদ্ভূত এক আইন আছে। লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালানো যায় ফ্রান্সের রাস্তায়। অবশ্য কিছু শর্ত আছে। ড্রাইভারকে ১৪ বছরের বেশি বয়সের হতে হবে। চার চাকার গাড়ি অপারেট করার পারমিশন থাকতে হবে। তাছাড়া এমন গাড়ি চালাতে হবে যার গতিসীমা সর্বোচ্চ ঘন্টায় ২৮ মাইল। ধীরগতির এসব গাড়ি ফ্রান্সে অনেক বেশিই দেখা যায়। তবে এমন গাড়িগুলো অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়।
তেলের ট্যাঙ্ক ভরে রাখুন
জার্মানি
জার্মানিতে কঠোর এক আইন আছে। তেল ছাড়া গাড়ি চালানো যায় না। সেই তেলের অভাবে প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জার্মানিতে বিষয়টা ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এর অবশ্য কারণও আছে। জার্মানির প্রায় রাস্তাতেই গতির কোনো সীমা নাই। সেখানে ড্রাইভাররা ইচ্ছেমতো গতিতে গাড়ি চালাতে পারেন। রাস্তার পাশে থেমে থাকা গাড়ি একসিডেন্টের কবলে পড়তে পারে। এ কারণে গাড়ির তেল শেষ হওয়া জার্মানিতে বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৭০ ইউরো (প্রায় ৭ হাজার টাকা) পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে ট্র্যাফিক পুলিশ।
Leave a Reply