বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাচ্ছে ১শ’ কিলোমিটার গতির ১০ লোকোমোটিভ ইঞ্জিন। এর ফলে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীরা আগের চেয়ে কম সময়ে পৌঁছাবেন বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী ফকির মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, রেলওয়েতে এর আগে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতির ইঞ্জিন চলাচল করেছে। কোরিয়া থেকে আমদানি করা ইঞ্জিন ১০০ কিলোমিটার গতি সমপন্ন। ফলে যাত্রীরা আগের চেয়ে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছবেন। যাত্রীবাহী ট্রেনে ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রেনেও কিছু ইঞ্জিন যুক্ত করা হবে। এতে রেলওয়ের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
বর্তমানে ইঞ্জিনগুলো পাহাড়তলী ডিজেল লোকোমোটিভ শপে রাখা হয়েছে। পাহাড়তলী ডিজেল লোকোমোটিভ কারখানার তত্ত্বাবধায়ক রাজীব কুমার চক্রবর্তী জানান, কোরিয়া থেকে গত ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে লোকোমোটিভগুলো আসার পর সেগুলো পাহাড়তলী কারখানায় আসে ২ সেপ্টেম্বর। এখন পর্যন্ত চারটি লোকোমোটিভের লাইট এবং একটি লোড ট্রায়াল সমপন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, কোরিয়া থেকে প্রতিনিধিদল এসেছে তারা এসব ইঞ্জিনের কমিশনিং করছেন। ৯ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রকৌশলী মি. টনি এবং রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার মিন লি। তারা পাহাড়তলী ডিজেল শপ থেকে চিনকি আস্তানা স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার লাইট ট্রায়ালে যাচ্ছে ইঞ্জিনগুলো। এ পর্যন্ত চারটি ইঞ্জিনের লাইট ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। কোচ কম্পোজিশন অনুযায়ী ১৮টি কোচ প্যাসেঞ্জার বহন ক্ষমতার ওজনের বালুর বস্তা দিয়ে একটি ইঞ্জিনের লোড ট্রায়ালও করা সম্পন্ন হয়েছে। ট্রায়ালে শতভাগ কার্যকর প্রমাণ হলে ইঞ্জিনগুলো যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত হবে। তিনি বলেন, লোকোমোটিভের ট্রায়াল পর্যায়ক্রমে শেষ করে আমরা প্রতিবেদন জমা দিব। তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন দশটি মিটারগেজ ইঞ্জিন বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু হবে। তবে এতে রেলপথের অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো মারাত্মক ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ২৮০টি লেভেল ক্রসিং নিয়ে উদ্বিগ্ন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কারণ, রেলে এর আগে এত উচ্চ গতির ইঞ্জিন চলাচল করেনি। এত গতির ইঞ্জিন চলাচলের উপযোগী নয় রেলপথও। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। সূত্রমতে, সদ্য আমদানি করা নতুন এই মিটারগেজ লোকোমোটিভগুলো তুলনামূলকভাবে অন্যগুলোর চেয়ে কিছুটা উঁচু।
লোকোমোটিভের হর্স পাওয়ার দুই হাজার। এসব ইঞ্জিন যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রেনেও যুক্ত হবে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেলওয়েতে এ পর্যন্ত ১৭৮টি মিটারগেজ এবং ৯০টি ব্রডগেজ মোট ২৬৮টি ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভ রয়েছে। এসব ইঞ্জিন দিয়েই বিভিন্ন রুটের ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। ট্রেনের তুলনায় ইঞ্জিনের সংখ্যা কম হওয়ায় যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে সমস্যা অনেক দিনের।
এ কারণে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেনে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। তাতে পথিমধ্যে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাতায়াতে ব্যাঘাতের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এজন্যই রেলওয়ে নতুন ইঞ্জিন আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় মিটারগেজ এসব ইঞ্জিন কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পনির কাছ থেকে কেনা হয়েছে।
Leave a Reply