বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বরফের রাজ্যে ভয়াবহ রকমের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। শত শত বছর ধরে জমে থাকা বরফ গলে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এ বিষয়ে মোটামুটি সকলেরই একটা ধারণা ছিল। তবে দীর্ঘ এক বছর আর্কটিক জোনে গবেষণা করার পর আরও ভয়াবহ তথ্য দিল এক জার্মান জাহাজের বিজ্ঞানীরা। আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউটের আরভি পোলারস্টার্ন জাহাজ আর্কটিক জোনে এক বছর কাটিয়ে ফিরেছে জার্মানিতে। আর ফিরেই এই জাহাজের বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়েক দশকের মধ্যেই পৃথিবীতে আর কোনো বরফ থাকবে না গ্রীষ্মকালে!
বরফ পৃথিবীর সৌন্দর্য্যরে জন্যই কেবল নয়, বরং এর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্কটিক জোনে অভিযান পরিচালনাকারী জাহাজের দলনেতা প্রফেসর মারকুস রেক্স বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি কিভাবে মহাসমুদ্র আর্কটিক মৃত্যূর দিকে ধাবিত হচ্ছে। জানালা দিয়ে উঁকি দিলেই আমরা এর ভয়াবহ রূপ দেখতে পেয়েছি। আবার বরফের উপর দিয়ে হাঁটার সময়ও তা বুঝতে পেরেছি।’
বিশটি দেশের সত্তরটিরও বেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই অভিযানে অংশ নিয়েছে। দলের নেতা রেক্স বলেছেন, ‘মাঝে মধ্যে আমাদের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বরফ গলতে দেখেছি। নর্থপোল নিজ থেকেই গলছে। পাতলা হয়ে গেছে বরফের স্তর।’ বিশ^ব্যাপী ক্লাইমেট চেঞ্জেরই ভয়াবহ প্রভাব এসব। কার্বডাইঅক্সাইডের নির্গমন বেড়ে যাওয়ায় ওজোন স্তর ধ্বংস হচ্ছে। বাতাস দূষিত হচ্ছে। পৃথিবীর ইকোসিস্টেমই ধ্বংসের মুখে পড়ে গেছে। রেক্সের মতে, কয়েক দশকের মধ্যে গ্রীষ্মকালে কোনো বরফই থাকবে না আর্কটিকে। বর্তমানে প্রতি দশকে ১৩ শতাংশ করে বরফের পরিমাণ কমছে পৃথিবীতে। ১৯৮০ সালে আর্কটিকে ৭.৫ মিলিয়ন স্কয়ার কিলোমিটার বরফ ছিল। ২০২০ সালে এসে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.৭ মিলিয়ন স্কয়ার কিলোমিটার।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর নরওয়ের ট্রমসো থেকে যাত্রা করেছিল ১৩০ মিলিয়ন ইউরো দামের জাহাজটি। এক বছরেরও বেশি সময় গবেষণার পর ভয়াবহ তথ্যই দিলেন জাহাজের বিজ্ঞানীরা।
Leave a Reply