রেললাইনের পাশেই ডোবা। সেই ডোবায় মাছ ধরার জন্য শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি সেচ দিচ্ছিলেন তিন ভাই। সারারাত পরিশ্রমের ফলে ভোরের দিকে হয়তো কিছুটা ক্লান্তি পেয়ে বসেছিল। তাই রেললাইনের ওপরই গা এলিয়ে দিয়েছিলেন স্বপন মিয়া, রিপন মিয়া ও মোকলেছ মিয়া। সেই ঘুম থেকে চিরঘুমে চলে গেলেন তিন ভাই। ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেছে তাদের। স্বপন ও রিপন আপন দুই ভাই এবং মোকলেছ তাদের চাচাতো ভাই।
গতকাল রোববার ভোরে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা সদরের সাহতা ইউনিয়নের দশাল এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্বপন (২২) ও রিপন (২৪) উপজেলার স্বল্প দশাল গ্রামের মৃত আবদুল হেকিমের ছেলে এবং মোকলেছ (২৮) মৃত কুরবান আলীর ছেলে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই তিন ভাই ডোবায় পানি সেচতে সেচতে রেললাইনে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
ভোর ৪টার দিকে মোহনগঞ্জগামী হাওর এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে তিনজনই মারা যান। সকালে দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী বারহাট্টা থানা পুলিশকে জানায়। পরে রেলওয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনের আহাজারি থামছেই না। ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ওসি মাজহারুল হক জানান, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের জন্য দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
এদিকে, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবার দুটি। তারা তিনজনই ছিলেন হতদরিদ্র জেলে। মাছ বেচে সংসার চলত তাদের। ১০ বছরের কন্যাসন্তান নিয়ে এখন কীভাবে সংসার চলবে, সেই দুশ্চিন্তায় কূল খুঁজে পাচ্ছেন না মোকলেছের স্ত্রী কবিতা আক্তার। তিনি বলেন, এখন কীভাবে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। আর দুই ছেলেকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ স্বপন ও রিপনের বৃদ্ধ মা মালেকা। তিনি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন।
বারহাট্টা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাইনুল হক কাসেম জানান, ঘটনার পরপরই তিনি নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বলেন, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারিভাবে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Leave a Reply