1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
র‌য়্যাল এনফিল্ডের ৩৫০ সিসির নতুন ৪ বাইকের যত ফিচার ঝালকাঠি থেকে ১১ রুটে বাস চলাচল বন্ধ বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ১০ দেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হলেন স্টার লাইনের হাজী আলাউদ্দিন তরুণরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামুক আবার পেট্রোনাস লুব্রিক্যান্টস বিক্রি করবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ মন্ত্রী এমপিদের দেশত্যাগের হিড়িক : নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন অনেকেই বাস ড্রাইভার নিকোলাস মাদুরো আবারও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ইউএস-বাংলার দশম বর্ষপূর্তি : ২৪ এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে বিদেশে ২০ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা

সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতেই হবে

ইলিয়াস কাঞ্চন 
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস

আজ ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’- এ স্লোগানে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের জন্ম আজ থেকে ২৭ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারিয়ে আমি এ আন্দোলন গড়ে তুলি। স্ত্রীকে আর ফিরে পাব না এটি জানি; কিন্তু আর কারও স্ত্রী, বোন, ভাই, বাবা-মা এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিক তা চাইনি। এ কারণে নিজের চলচ্চিত্র জগতের ক্যারিয়ার ছেড়ে দেশের মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা শুরু থেকে একটি সময়োপযোগী আইনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। শুধু আইন করলেই হবে না, সড়কে আইন মানতে মানুষকে সচেতন করার ওপরও জোর দিই। এজন্য ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানাই। আমাদের লক্ষ্য ছিল, নিরাপদ সড়কের জন্য একটি দিবসকে যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা যায়, তাহলে জনগণের মাঝে এ বিষয়ে একটি সচেতনতা তৈরি হবে।

সরকার আমাদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটির জাতীয় স্বীকৃতি দিয়েছে এবং দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এতে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিনের আরেকটি দাবি, সময়োপযোগী সড়ক আইন, সেটিও পূরণ হয়েছে। এখন দরকার এ আইনের সঠিক প্রয়োগ; কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে- ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর প্রয়োগের দিন থেকেই আইনটি কার্যকারিতা হারাতে থাকে।

সড়ক পরিবহন আইনের সংস্কার আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সরকারও বিভিন্ন সময় ১৯৮৩ সালে প্রণীত আইনটিকে সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এতে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবহন সেক্টরের একটি অশুভ শক্তি। সড়কের বিশৃঙ্খল অবস্থার বাস্তবচিত্র এবং ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু, বাসচাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদের মৃত্যু এবং দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো রাজীবের মৃত্যুসহ বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন এ আইনটি পাসের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

অবশেষে কোনো চাপের মুখে নতিস্বীকার না করে সরকার আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করে ২০১৮ সালে। এর প্রায় ১৫ মাস পর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর শুরু করে সরকার। প্রথম ১৪ দিন সহনীয় মাত্রায় এর প্রয়োগ ছিল। পরবর্তী সময়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিতে আইনের কয়েকটি বিষয় পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। করোনার কারণে তা এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়িয়েছে।

তখন থেকে আমরা লক্ষ করেছি, সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর প্রয়োগ পূর্বঘোষিত সময়ে যখন শুরু করে তখনও পরিবহন সেক্টরের সেই চক্রটি বাধা সৃষ্টি করে। তারা নতুন করে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় আমার কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। আমাকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়।

কিন্তু হতাশাজনক বিষয় হল, নতুন আইনের বিষয়ে তারা কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। তারা শুধু দোষারোপ করে গেছে। সময় থাকতে গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস এবং গাড়ির আকৃতি পরিবর্তনজনিত অনিয়ম-ত্রুটিগুলো সংশোধনে তারা মনোযোগ দেয়নি। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি যদি তারা নতুন আইন প্রয়োগের আগেই সমাধান করতেন, তাহলে নতুন করে আইনের কয়েকটি বিষয় ছাড়ের সময়সীমা আর বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। এছাড়া আইনটির কিছু জায়গায় সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে বলেও আমরা জেনেছি।

এ অবস্থায় আমাদের অনেকদিনের প্রত্যাশিত নতুন এ আইনের কার্যকারিতা প্রশ্নের সম্মুখীন। তাই আমরা মনে করি, নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি যদি কোনো মহলের চাপের মুখে ব্যাহত হয় এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আমরা দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ, দারিদ্র্য বিমোচন ও এসডিজি বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন দেখছি তা পূরণ হবে না। আগে যেখানে ছিলাম- অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল আর অসহায় পরিবারের কান্না চলতেই থাকবে। তাই আমরা মনে করি, এ আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে যদি কোনো মহলের চাপের মুখে সরকার মনোভাব পরিবর্তন করে, তাহলে হেরে যাবে ১৮ কোটি জনতা। সেই সঙ্গে হেরে যাবে বাংলাদেশ।

আমি কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই। আমি আপামর মানুষের স্বার্থে কথা বলি। আজকের সড়ক পরিবহন আইনটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ২০১২ সালে। আইনের খসড়া সরকার ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখে দীর্ঘদিন। অংশীজনদের এ আইনে সম্পৃক্ত করা হয়। জনগণের মতামত দেয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে যেসব সংগঠন কাজ করে তাদের প্রতিনিধিরাও মতামত দিয়েছেন। গণপরিবহন সেক্টরের চালক, মালিক-শ্রমিকদের মতামত ও দাবি-দাওয়া শুনেছে সরকার। সবার মতামতের ভিত্তিতে ৩৫ বছরের পুরনো আইনকে যুগোপযোগী করার চেষ্টা করেছে সরকার। আমিও অন্যদের মতো নিসচার পক্ষ থেকে দেশের সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে আইনের বিষয়ে আমাদের মতামত তুলে ধরেছিলাম।

আমি বিভিন্ন সময় একটি কথা প্রায়ই বলে থাকি- ‘যদি আমি ইলিয়াস কাঞ্চন সড়কে কোনো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থাকি, তাহলে এ আইনে আমারও সাজা হবে। আমি ভুল করলে বা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হলে আইন অনুযায়ী আমারও বিচার হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সড়কে সবাইকে আইন মানতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। শুধু পরিবহন চালক নয়, সব চালকের জন্যই এ আইন।’ সড়কে ভারী যান বলতে যেটি বোঝায় (বিআরটিএ’র তথ্যমতে) যেমন- বাস, ট্রাক, কার্গোভ্যান, কাভার্ডভ্যান, ট্যাঙ্কার ও বিশেষ ভারী বাহনের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৮২১ আর চালক রয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭২০ জন। অথচ সর্বমোট যানবাহনের সংখ্যা ৪২ লাখ ১৭ হাজার ৫২৩। আর চালকের সংখ্যা সর্বমোট ৩৬ লাখ ২ হাজার ৪১৯ জন। আমি শুধু বাস-ট্রাক চালকদের নয়, সব চালককে সচেতন হওয়ার কথা বলি, যা প্রত্যেকেরই বলা উচিত।

যদি বাস ও ট্রাকচালক, যাত্রী, রিকশাচালক, পথচারী, ব্যক্তিগত গাড়ির চালক বা মালিক- সবাই সড়কে আইন মেনে চলে, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটবে না। একজনের জন্য অন্যজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আমি তো এটাই চেয়ে আসছি। আমরা সবাইকে সচেতন, দক্ষ চালক তৈরি, পেশাদার চালকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের আরও দক্ষ-মানবিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, একটি ক্ষুদ্রচক্র তবুও আমার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আসছে। পরিবহন চালক, শ্রমিকদের আমার প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির করার অপচেষ্টা করছে, তাদের ক্ষেপিয়ে তুলে নিজেদের আখের গোছাতে চাইছে হয়তো।

যুগোপযোগী এ সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হওয়ার পর সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহল আইনের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। এ আইন কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে। কিন্তু আইন সম্পর্কে সবাই অবগত না থাকার কারণে সে সময় প্রথম দফায় ১৪ দিন সময় দেয়া হয়। এরপর যখন আইনটির প্রয়োগ শুরু হল, ঠিক সে সময় আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম চারদিকে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। আমার প্রশ্ন, কেন এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হল? তাছাড়া আইনটির প্রয়োগে অসুবিধা কোথায়? আমাদের কথা হল, আইনটি প্রয়োগের কিছুদিন যাক, এ আইনে কার কী সমস্যা দেখা দিচ্ছে বা কার কী ক্ষতি হচ্ছে সেটি আগে দেখুন, এরপর আইনের সঙ্গতি-অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলুন। তা না করে কোনো ক্ষতি না হওয়ার আগেই ভয় পেয়ে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে, চারদিকে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। এ অস্থিতিশীল পরিবেশ আমরা সচেতন নাগরিক হিসেবে কেউ কামনা করি না।

প্রশ্ন রাখতে চাই- যারা আজ পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চাইছেন, তারা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে বিভিন্ন নামে এ টাকার কত অংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করেছেন? এ প্রশ্ন করোনাকালীন পরিবহন শ্রমিকদের হাহাকারে উঠে এসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য এ টাকা কি কখনও ব্যয় করা হয়েছে? শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোনো ইন্সটিটিউশন গড়ে তুলেছেন? তাদের জন্য একটি হাসপাতালও কি গড়েছেন? কোনো শ্রমিক পল্লী গড়ে তুলেছেন? বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থা, গোষ্ঠী, কমিউনিটি বেইজড আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে, এমন কোনো নজির তারা শ্রমিকদের জন্য তৈরি করতে পেরেছেন কি? অথচ দেখা যায়, বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১ হাজার শ্রমিক (চালক-হেলপার) মারা যান।

আরেকটি কথা। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তির যে কথা বলা হয়েছে, তা কি শুধু তাদের একার (তাদের একার বলতে ২ লাখ ৬১ হাজার ৮২১ বাস, ট্রাক, কার্গোভ্যান, কাভার্ডভ্যান, ট্যাঙ্কার ও বিশেষ ভারী বাহনের ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭২০ চালককে বোঝাতে চাইছি) জন্য? যদি সাজা কমানো হয়, জামিনযোগ্য করা হয়, তাহলে কি প্রতি বছর যে পরিবহন শ্রমিকরা মারা যান, তাদের রক্ষা করা যাবে? নাকি তাদের সুরক্ষা দেয়া যাবে?

আমার মতে, মূলত পরিবহন সেক্টরে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে তৎপর স্বার্থান্বেষী মহলটি সড়ক পরিবহন আইন চায় না। তারা আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে চায়, নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, সড়কে মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে চায়। কখনও কখনও সড়ক আইনের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের উদাহরণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, সড়কে সহিংসতাও করেছে তারা। এমনকি তাদের ডাকা ধর্মঘটে সাড়া না দিয়ে সড়কে গাড়ি চালানোর কারণে চক্রটি বিভিন্ন স্থানে চালকদের ওপর হামলা করেছে, কান ধরে উঠবস করিয়েছে এবং মুখে পোড়া মবিল দিয়ে হেনস্তা করেছে। এভাবে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এ আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বরাবর, যা সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন।

আমাদের কথা হচ্ছে, যুক্তির জায়গায় থেকে আস্থা অর্জনে এগিয়ে যেতে হয়। ভয় কিংবা জিম্মি করে নয়। আমরা কোনো সমস্যা মাঠে টিকে থাকুক তা-ও চাই না। একটু ধৈর্য ধরে আইনের ভেতরে গিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এ আইনটিতে কাউকে এককভাবে দায়ী বা টার্গেট করা হয়নি, বিশেষ করে চালক শ্রেণিকে তো নয়ই। বরং তাদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, নিয়োগপত্রসহ গাড়ি চালনায় সঠিক পরিবেশ তৈরির কথাও রয়েছে। তবুও কেন এ বিরোধিতা, কেন এ আইনকে মেনে না নিতে পারার মানসিকতা?

এরপরও যারা না বুঝে এ বিষয়টি নিয়ে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি করে জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়াচ্ছেন, আশা করি তারা নিজেদের ভুলগুলো বুঝে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। আজ পরিবহন সেক্টরের কিছু মানুষের নৈরাজ্যের কারণে আপনাদের ভোগান্তি হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, এ ভোগান্তি সাময়িক। দীর্ঘ সমাধানের জন্য এরকম সাময়িক ভোগান্তি আরও আসতে পারে। ভালো কিছু অর্জন করতে হলে সাময়িক ভোগান্তি হয়তো আমাদের সহ্য করতে হবে। ধৈর্যহারা হবেন না। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাবই। নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় সবাই এগিয়ে আসবেন বলে আমি আশা করি।

অতীতেও বিভিন্ন বাস টার্মিনালে আমি যখন সচেতনতামূলক প্রচারে গেছি, তখন আমাকে অবাঞ্ছিত করেছেন তারা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমি যখনই সড়ক আইনের জন্য সোচ্চার হয়েছি, তখনই এর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে একটি পক্ষ। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, চক্রান্ত করেছে, হুমকিও দিয়েছে।

বলা হয়ে থাকে, আমি চালকদের বিপক্ষে কথা বলি। কিন্তু কথাটি মোটেও সত্য নয়। আমি নিরাপদ সড়কের স্বার্থে চালকদের পক্ষে শুধু কথাই বলি না, কাজও করি। আমাদের প্রতিষ্ঠিত নিসচা মেকানিক্যাল ড্রাইভিং ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, তাদের সচেতনতা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষ চালক তৈরি করা হচ্ছে। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির কথা সবসময়ই বলে আসছি। কিন্তু এরপরও আমার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমি কারও পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলি না, আমি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলি। যারাই অনিয়ম করেন তাদের বিপক্ষে কথা বলি। কোনো কোনো চালক ধরে নেন, তাদের বিপক্ষে কথা বলছি। এটি দুঃখজনক কিংবা ভুল বোঝাবুঝি।

আমার চূড়ান্ত প্রত্যাশা দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা করা। যতদিন এটি পূরণ না হবে ততদিন আমি ও নিসচা’র কর্মীরা সড়কে আছি, থাকব। আইন প্রয়োগ নিয়ে চলমান সংকট উত্তরণে আইনটির যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদার এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত কমিটি যে ১১১টি সুপারিশ করেছে, তাতে বাস্তবায়নের পথনির্দেশ রয়েছে। পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কেউ আইন ভঙ্গ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার শঙ্কা অমূলক। যারা অন্যায় করবেন, তাদেরই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পরিবহন মালিক হোক বা শ্রমিক, কারও চাপের মুখে নতিস্বীকার করা যাবে না। আইনের বাস্তবায়ন আটকে রাখা যাবে না। মানুষকে জিম্মি করে, সরকারকে বিব্রত করে যদি কেউ এ আইনের বাস্তবায়ন ঠেকানোর চেষ্টা করেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাই এখন আমাদের দাবি। সবশেষে বলব, পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়।

ইলিয়াস কাঞ্চন : চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT