নাবিক পাল্টানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায়, ৫৯ শতাংশ নাবিক তাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। ২৬ শতাংশের বেশি নাবিক আন্তর্জাতিক আইনের সর্বোচ্চ সময়ের বেশি সময় ধরে বিদেশে রয়েছেন। অনেকে টানা ১৮ মাস ধরে আছেন সমুদ্রে।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরই নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন সমুদ্রে আটকে রয়েছেন লাখ লাখ নাবিক। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ৪ লাখ নাবিক ঘরে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। মহামারির সংক্রমণ রোধে দেশগুলো নৌবন্দর বন্ধ করে দেওয়ায় এবং কিছু দেশে নাবিক পাল্টানোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তারা এই দীর্ঘ সময় সমুদ্রেই কাটাচ্ছেন।
দীর্ঘসময় সমুদ্রে কাটানোয় ক্লান্তি ও অবসাদে ভুগছেন বেশিরভাগ নাবিক। অধিকাংশ নাবিকের ইতোমধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের সর্বোচ্চ ১১ মাস সময়ের বেশি কাজ করছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
৯২৬ জন নাবিকের ওপর চালানো ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার ফেডারেশনের (আইটিএফ) সাম্প্রতিক একটি জরিপের ওপর ভিত্তি করে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিসি। জরিপের ফলাফলে জানা যায়, নাবিক পাল্টানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায়, ৫৯ শতাংশ নাবিক তাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। ২৬ শতাংশের বেশি নাবিক আন্তর্জাতিক আইনের সর্বোচ্চ সময়ের বেশি সময় ধরে বিদেশে রয়েছেন। অনেকে টানা ১৮ মাস ধরে আছেন সমুদ্রে।
ক্লান্তি ও অবসাদে ভোগার কারণে মানুষ ও সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর- এমন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে জরিপটিতে। অংশগ্রহণকারীদের ৭১ শতাংশ জানান, ০-১০ স্কেলে এর সম্ভাবনা পাঁচ বা তার বেশি। সম্ভাবনা ১০ বলে জানান ১৫ শতাংশ নাবিক। ৮ শতাংশ নাবিক বেতন ছাড়াই কাজ করছেন, ৩০ শতাংশ নাবিকের মেডিকেল সাহায্যের প্রয়োজন, যা তারা সমুদ্রে পাচ্ছেন না।
হংকং শিপওনারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বিয়র্ন হোগার্ড জানান, ডেন্টিস্টের কাছে যেতে না পারায়, দাঁতের ব্যথায় নাবিকরা নিজেই দাঁত তুলে ফেলেছেন- এমন ঘটনাও শুনেছেন তিনি। অ্যালেক্সে কুলিবাবা নামের এক রাশিয়ান নাবিক স্ট্রোক করার পর করোনা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইন্দোনেশিয়ান সরকার জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দেয়নি। ফলে স্ট্রোক পরবর্তী কিছুদিন তিনি চিকিৎসা পাননি। তার শরীরের একাংশ এখনো কাজ করছে না; দৈনন্দিন কাজেও সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এসব অভিজ্ঞতার কারণে ভবিষ্যতে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন অনেকে।
মহামারির মধ্যেও নাবিকরা বৈশ্বিক অর্থনীতি সচল রেখেছেন। ইউনিলিভারসহ আরও ৩০টি প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছে। ইউনিলিভারের প্রধান সাপ্লাই চেইন অফিসার মার্ক এঙ্গেল জানান, ‘বর্তমান এই পরিস্থিতির কারণে ইউনিয়নগুলো অভিযোগ করলেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংকট শুরু হবে।’ জাহাজে অবস্থানের সর্বোচ্চ সময়ের অতিক্রমের অভিযোগ আসায়, ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া পদক্ষেপ নিয়েছে। দুটি জাহাজ আটক করা হয় এই অভিযোগের পর।
সিঙ্গাপুর মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার নাবিক পাল্টানোর অনুমতি দিয়েছে। করোনা টেস্ট এবং দুই সপ্তাহের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নিয়ম অনুসরণ করেছে দেশটি। আইটিএফ-ও বর্তমানে সিঙ্গাপুরের এই মডেল অনুসরণে উদ্যোগ নিচ্ছে। সূত্র: বিবিসি, টিবিএস।
Leave a Reply