রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট পরিদর্শন করেছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে তারা বলেন, প্রতি বছর ১৭শ’ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয় বিদেশ থেকে বিটুমিন আমদানি করতে। অথচ, নিম্নমানের সেসব বিটুমিনের তৈরি রাস্তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা দীর্ঘস্থায়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশের মধ্যে উৎপাদন হওয়ায় সহজেই এই বিটুমিনের মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। তারা মান নিয়ন্ত্রণে অত্যাধুনিক ল্যাবও স্থাপন করেছে। বসুন্ধরার বিটুমিন বাজারে আসলে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে আর বিটুমিন আমদানি করতে হবে না, উল্টো রপ্তানি করা যাবে।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (টেকনিক্যাল সার্ভিসেস উইং) ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ও বাংলাদেশ সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক মো. আহসান হাবিবের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে ড. আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে বিটুমিনের সড়কগুলো দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। এখানে ৯০ শতাংশের বেশি রাস্তা ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট। এসব রাস্তায় যান চলাচলের ধরণভেদে বিভিন্ন ধরণের বিটুমিন লাগে। মডিফায়েড বিটুমিন দরকার। বসুন্ধরার যে প্লান্ট দেখলাম তাতে সব ধরণের বিটুমিন তৈরির সক্ষমতা তাদের আছে। বাংলাদেশে বছরে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টন বিটুমিন দরকার হয়। আমাদের দেশে সরকারিভাবে উৎপাদন হয় ৭০-৮০ হাজার টন। তিন-চতুর্থাংশ বিটুমিন আমদানি করতে হয়। আমদানি বিটুমিনের মান নিয়ে সব সময়ই সন্দেহ থাকে। এটা নিয়ে আমরাও উদ্বিঘœ। এটা বিদেশ থেকে আসে। পরিবহন, সংরক্ষণ ও হস্তারের সময় ভেজাল হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। বসুন্ধরার এই প্লান্টে প্রথম ধাপেই চার লাখ টন বিটুমিন তৈরি করা সম্ভব- এমনটাই দেখলাম। তাহলে শুধু দেশের চাহিদা মেটানো নয়, বিটুমিন বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সঠিক নকশা ও উপকরণ দিয়ে সড়ক তৈরি করতে পারলে অন্তত ৫০ বছর তা টিকে থাকবে। একইসঙ্গে হাই ট্রাফিকের জন্য মডিফায়েড বিটুমিন তৈরি দরকার যেটা বাংলাদেশে ছিল না। আমরা খুশি যে বসুন্ধরা এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে এবং কাস্টমাইজড বিটুমিন তৈরি করতে পারবে। সওজ যে পরিমাণ ও যে ধরণের মডিফায়েড বিটুমিন ব্যবহার করতে চায় তা তৈরির সক্ষমতা এই প্লান্টের আছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারলে বাংলাদেশে ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট (বিটুনিমের নমনীয় সড়ক) নির্মানে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি।
এ সময় উপস্থিত আইইউটি- এর সহকারি অধ্যাপক ও বিটুমিন গবেষক ড. নাজমুস সাকিব বলেন, বসুন্ধরা যে সব ল্যাব স্থাপন করেছে ও যন্ত্রপাতি এনেছে তাতে মান নিয়ন্ত্রণটা খুব ভালভাবে করা যাবে। এছাড়া তারা গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ (আরএন্ডডি) করছে। গবেষণার মাধ্যমে তারা পলিমারাইজড বিটুমিন তৈরি করছে। ট্রায়াল রোড করে বিটুমিন পরীক্ষা করার আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা যে ধরণের পলিমারাইজড মডিফায়েড বিটুমিন উৎপাদনের কথা বলছে তা আমাদের আশপাশের কোন দেশই উৎপাদন করে না। এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করবে।
পরিদর্শনের আগে প্রতিনিধি দলকে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্লান্ট সম্পর্কে অবহিত করেন বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তারা। বসুন্ধরা সিমেন্টের চীফ মার্কেটিং অফিসার কিংশুক হোসেন দেশের উন্নয়নে বসুন্ধরা বিটুনিনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বসুন্ধরা অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী নাফিজ ইমতিয়াজ আলম বলেন, বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টে কয়েক ধরণের মডিফায়েড বিটুমিন তৈরি হবে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- বিভিন্ন ঋতুতে ব্যবহার করা যায় এমন বিভিন্ন গ্রেডের বিশেষায়িত বিটুমিন তৈরি করা হবে। এসবিএস পলিমার বেজড বিটুমিন তৈরি করছি যা একেবারেই নতুন। এটা খুবই দীর্ঘস্থায়ী ও পানিরোধী। আমাদের বার্ষিক বিটুমিন চাহিদা সাড়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন। আমরা প্রথম ধাপেই তিন লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদন করব। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বার্ষিক ৯ লক্ষ মেট্রিকটন উৎপাদন করব এবং ৪ লাখ মেট্রিকটন বিটুমিন বিদেশে রপ্তানি করব। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বিটুমিন আমদানিতে। এটা প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
3 Attachments
Leave a Reply