প্রতিদিনের মতোই কুড়িল ফ্লাইওভার হয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন সাজ্জাতুল বারি (৩৭)। কিন্তু মোটরসাইকেলে ফ্লাইওভার থেকে এয়ারপোর্ট সড়কে নামার সময় সংস্কারহীন ফ্লাইওভারের একটি গর্তে পড়ে ছিটকে পড়েন তিনি রাস্তায়। পরক্ষণে একটি গাড়ি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে।পুলিশ জানায়, সাজ্জাতুলের বাবার নাম রহিম মিয়া। গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে। থাকতেন রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধ এলাকায়। পরিবারে দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। সাজ্জাতুলের স্ত্রী পারুল আক্তার ও একটি তিন বছরের মেয়ে রয়েছে। তিনি দুই বছর ধরে ইউএস-বাংলায় চালক হিসেবে চাকরি করেন। ছয় মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের গাড়ি চালাতেন।
ইউএস-বাংলার জেনারেল ম্যানেজার অ্যান্ড অ্যাডমিন, সিকিউরিটি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ ভুইয়া বলেন, ‘আমরা অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম। র্যাডিসন হোটেলের সামনে যাওয়ার পর একজন পুলিশ সদস্য ফোন দিয়ে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান। দ্রুত গিয়ে দেখি সাজ্জাতুলের লাশ ফুটপাতে রেখে দেওয়া হয়েছে।’
খিলক্ষেত থানার ওসি বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নিকুঞ্জ-১ এলাকায় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর কোন গাড়ি তাঁকে চাপা দিয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, কুড়িল ফ্লাইওভারটি যেন পুরোপুরি অভিভাবকশূন্য। পুরোটা জুড়ে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রেলিং নেই, সড়কবাতির খুঁটি থাকলেও বাতি জ্বলে না। সব মিলিয়ে ফ্লাইওভারজুড়ে দুর্বিষহ অবস্থা। এমন বেহাল অবস্থার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে প্রাণহানি। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। সংস্কারেরও হাত পড়ে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুড়িল থেকে ৩০০ ফিট হয়ে এয়ারপোর্ট সড়কে নামা এবং উল্টো পথে কুড়িল নামার ফিরতি ফ্লাইওভারে এমন বেহাল না কাটার নেপথ্যে অন্যতম কারণ হলো নির্দিষ্ট অভিভাবক না থাকা। ফ্লাইওভারটি বুঝিয়ে দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে চলছে টানাপড়েন।
জানা গেছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এক বছর আগে ফ্লাইওভারটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লাইটিংসহ বিবিধ কারণে এটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এ কারণে সিটি করপোরেশনও এটির উন্নয়নে হাত দেয়নি।
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী রায়হান ফেরদৌস বলেন,‘ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কষ্টদায়ক। বছরখানেক হয়ে গেলেও লাইটিংসহ কিছু কারণে সিটি করপোরেশনকে ফ্লাইওভারটি হস্তান্তর করা হয়নি। এর পরও ডিএনসিসি উন্নয়নকাজগুলো করতে পারত। আসলে রাজউকের যে ব্যবস্থাপনা সে অনুযায়ী আমরা রিপেয়ারিংয়ের কাজগুলো করি না।’
ডিএনসিসির অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শরীফ উদ্দীন এ ব্যাপারে বলেন, ‘কুড়িল ফ্লাইওভার আমরা বুঝে পাইনি। এটি রাজউকের অধীনে রয়েছে।’
Leave a Reply