ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল গত জুন পর্যন্ত। এই সময়কালে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৬৯ শতাংশ। তবে প্রকল্পের বাকি ৩১ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ করতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
এ প্রকল্পের পরিচালক মো. রমজান আলী বলেন, ‘দেশি-বিদেশি তিনটি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির কাজ করছে। এর মধ্যে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন প্রকল্পটির মূল কাজ বাস্তবায়ন করছে। গত জুন মাসে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের শুরু থেকে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট অনেকেই চীনে গিয়ে ফিরতে পারেনি। এসবের কারণে নির্মাণকাজে ব্যাঘাত হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত (৭২ কিলোমিটার) ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন পায়। ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ছয় বছর মেয়াদি প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব (জিওবি) এবং এডিবি ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিমূল্য ২৩১ কোটি ৩৭ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৩ টাকা। চীনের রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এবং দেশের ম্যাক্স ও তমা কন্সট্রাকশন নামে দুটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির নির্মাণকাজ করছে। এ ছাড়াও প্রকল্পের নির্মাণকাজ তদারকিতে ৫টি যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সেগুলো হলো- কোরিয়া রেল নেটওয়ার্ক অথরিটি, কোরিয়ার দোহা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, জাপানের অরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড, ভারতের বেলাজি রেল রোড সিস্টেমস লিমিটেড ও বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড। প্রকল্পের অধীনে ১৩টি বড় সেতুসহ ছোট-বড় মোট ৪৬টি সেতু ও কালভার্ট নির্মিত হবে। এ ছাড়াও কম্পিউটারাইজড সিগন্যাল ব্যবস্থাপনাসহ ১১টি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে লাকসাম থেকে লালমাই পর্যন্ত অংশে ডুয়েলগেজ রেললাইনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের বাকি কাজ বাস্তবায়নে এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনের গতি বাড়বে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথ সাড়ে ৩ ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টায় ভ্রমণ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া ট্রেন লাইনচ্যুতির একটি লাইন বন্ধ থাকলেও অপরটি চালু রাখা যাবে। এতে ট্রেন দুর্ঘটনাও কমে আসবে। পাশাপাশি বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ক্যাপাসিটি ২৩ জোড়া থেকে আরও বাড়বে। এ ছাড়াও এই রেলপথ দিয়ে উচ্চতর এ এক্সেল লোকোমোটিভ দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
Leave a Reply