প্রকৃতিঘেরা নিসর্গভূমি চট্টগ্রামের বাঁশখালী। পূর্বে পাহাড়, পশ্চিমে সমুদ্র আর মাঝখানে রয়েছে সমতল ভূমি। যেখানে সারা বছরই শাক-সবজি ফলানো সম্ভব। শস্য শ্যামলা এই অঞ্চলটির সমুদ্র উপকূলকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই। আর তাই সব ধরনের উপযোগিতা বিবেচনায় মীরসরাই ও সীতাকুণ্ডের পর উপকূলীয় বাঁশখালীকে মেরিন ড্রাইভে যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাঁশখালীর উপকূলীয় অংশে আধুনিক বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়াও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অপার সম্ভাবনাময় বাঁশখালী অঞ্চলটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তথা শিল্পজোন হলে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হবে সেখানকার জনসাধারণ। গত ২৭ অক্টোবর বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে এসব কথা জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন।
জানা গেছে, বাঁশখালীবাসীর স্বপ্নপূরণে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। স্থানীয় গন্ডামারায় চীন-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করতে চলেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও নানামুখী তৎপরতা চালানোর প্রচেষ্টা চালায়। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের কারণে উন্নয়নকাজই কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর বেড়িবাঁধ সংস্কারে এগিয়ে আসেন বাঁশখালীর সংসদ সদস্য আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তার প্রচেষ্টায় প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ঢাল সংরক্ষণ, প্রায় ৪ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণসহ ২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁশখালীর উপ-প্রকৌশলী ধীমান কৃষ্ণ চৌধুরী ও মো. আবু তাহের জানান, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জোরারগঞ্জ থেকে শুরু করে মীরসরাই-সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ধরে বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহার করে কর্ণফুলী নদীর অপর পাড় এবং সেখান থেকে বাঁশখালী উপকূল ও চকরিয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে সড়কটি। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল ব্যবহার করা হলেও মাতামুহুরীসহ অন্য নদীগুলোর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্পটির সার্ভে শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানি এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গন্ডামারা ছাড়াও ছনুয়ায় ইতিমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য দেশের এক শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রায় ২শ একর জায়গার জন্য বায়না করেছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে উপকূলীয় সরল, বাহারছড়া, কাথরিয়া, খানখানাবাদ এলাকার বেশ কিছু জায়গা কিনে নিচ্ছে প্রায় ৮টি শিল্পগ্রুপ।
সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এলাকাটি মেরিন ড্রাইভে যুক্ত হলে সেখানকার কোনো জায়গাই আর খালি পড়ে থাকবে না। সর্বত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।’ এ সময় মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে সরকারের গৃহীত প্রস্তাবকে স্বাগত জানান তিনি।
Leave a Reply