পাসপোর্ট অফিসের একজন অফিস সহায়কের রূঢ় আচরণের প্রতিবাদ করায় আজমল হোসেন নামে কানাডা প্রবাসী যুবককে তার স্ত্রী ও শিশুসন্তানের সামনে মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পুলিশ খবর পেয়ে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করলেও এক কর্মচারীর মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন তিনি থানা হাজতে রয়েছেন। গতকাল রোববার জালকুঁড়ি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে মারধরের এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে আজমল হোসেন তার শিশুসন্তানের পাসপোর্ট তৈরির জন্য স্ত্রীকে নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যান। সেখানে আবেদন ফরম জমা দেওয়ার সময় অফিস সহায়ক মহসিন রূঢ় আচরণ করলে এর প্রতিবাদ করেন তিনি। ওই সময় বাদানুবাদের এক পর্যায়ে মহসিনের ডেস্কের সামনে থাকা কাচ ভেঙে যায়। তখন মহসিনসহ পাসপোর্ট অফিসের অন্য কর্মচারীরা এসে আজমলকে তার স্ত্রী-সন্তানের সামনেই বেধড়ক মারধর করেন। স্বামীকে বাঁচাতে তার স্ত্রী হামলাকারীদের কাছে অনুনয়-বিনয় করেন। তারপরও হামলাকারীরা আজমলকে পাসপোর্ট অফিসের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে দ্বিতীয় দফা মারধর করেন। খবর পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আজমলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। বিকেলে পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহায়ক মহসিন বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আজমল হোসনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানা হাজতে আটকে রাখা হয়। আজমল হোসেন নগরের উত্তর চাষাঢ়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা খাজা মোশারফ হোসেনের ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণের অভিযোগ পুরোনো। তাছাড়া এ অফিসে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আজমল হোসেন বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে কানাডায় বসবাস করেন। স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশে এসেছেন। তাদের পাসপোর্ট নেই। তাই কয়েক মাস আগে স্ত্রী মানসুরা আক্তারের জন্য পাসপোর্ট করতে পাসপোর্ট অফিসে যান। ওই সময়ও সেখানে একজন সিকিউরিটি গার্ড অহেতুক তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন।
তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবনে তিন মাসের শিশুসন্তানের জন্য পাসপোর্ট করতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সকালে এসে লাইনে দাঁড়াই। প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আবেদন জমা দেওয়ার স্থানে পৌঁছাই। সেখানে মহসিন নামে একজন আবেদন ফরম জমা নিচ্ছিলেন। আবেদন জমা নেওয়ার সময় তিনি প্রত্যেকের সঙ্গেই খারাপ ও রূঢ় আচরণ করছেন। ফরমে কোনো ত্রুটি থাকলে তার সেটি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। তিনি তা না করে আবেদনপত্রগুলো ছুড়ে ফেলে দেন। আমার সন্তানের আবেদনপত্র জমা দিলে তিনি সেটিও ফেলে দেন। তখন তার কাছে সমস্যা জানতে চাই। তিনি আমাকে সমস্যা না বলে দূরে যেতে বলেন। আমি তার আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি আমার কাছে কিছু কাগজের কথা বলেন। কাগজগুলো আবেদনে রয়েছে বলে তাকে দেখিয়ে দিই। এর পরও তিনি বলেন যে, পরে দেখব। তখন তার সঙ্গে বাদানুবাদের সময় তার ডেস্কের সামনে থাকা গ্লাসটি ভেঙে যায়। এর পরই তাদের লোকজন এসে আমার স্ত্রী ও শিশুসন্তানের সামনে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে টেনেহিঁচড়ে তিন তলায় নিয়ে যায়। সেখানেও অনেক মারধর করা হয়।
পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, আজমল হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার শিশুর জন্য আবেদনপত্র জমা দেন। ওই আবেদনপত্রে ব্যাংক জমার স্লিপ ও কাগজপত্র সত্যায়িত করেননি। বিষয়টি তাকে বোঝানোর পরও তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গ্লাসে ঘুষি দেন। তখন গ্লাস ভেঙে অফিস সহায়ক মহসিনের ওপর পড়ে তার হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আজমল হোসেনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহায়ক মহসিন মামলা করলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়
Leave a Reply