জোরেশোরেই এগিয়ে চলেছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ। প্রকল্পটি শেষ হলে পুরো বিমানবন্দরটিই পরিচালনা ও রক্ষাণাবেক্ষণ হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে। কিছুদিন আগে এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএবি); জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় (এমএলআইটি), মিতসুবিশি করপোরেশন এবং পিপিপি অথরিটির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মূলত প্রস্তাবটি দেয় মিতসুবিশি করপোরেশন।
জানা যায়, বৈঠকে এমএলআইটির এয়ারপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের পরিচালক মোরি এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মিতসুবিশির ১০টি বিমানবন্দর উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভিজ্ঞতা আছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের মান্দালাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মঙ্গোলিয়ার উলানবাতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। যাদের সঙ্গে ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে জাপানি এই কোম্পানিটির। মিতসুবিশির বাংলাদেশেও দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি আছে এবং তারা বর্তমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়নের কাজেও যুক্ত।
মিতসুবিশি কোম্পানির প্রতিনিধি গোসিমা ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তির প্রকল্প প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন- চুক্তির অধীনে পুলিশ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সের দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ সরকার। আর চুক্তিভুক্ত কোম্পানি এক ও দুই নম্বর টার্মিনাল এবং তিন নম্বর টার্মিনালের আশপাশের উন্নয়নের দায়িত্বে থাকবে; যার মধ্যে বর্ধিতকরণ, পরিচালনা ও বিমানবন্দরের সুবিধা বিদ্যমান। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তুলে ধরে গোসিমা জানান, ল্যান্ডিং চাজ, যাত্রী সুবিধা চার্জ, ডিউটি ফি আয়, কমিশন, হোটেল, অফিস, বিজ্ঞাপন বাবদ ফি ও কারপার্কিং থেকে আয় বাংলাদেশ সরকার ও কোম্পানির মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ভাগ হবে। আয়ের একটি অংশ বিমানবন্দর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য সেবাখাতে ব্যয় হবে।
ঢাকা বিমানবন্দরে বর্তমানে দুটি টার্মিনালে (টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২), যেখানে ১০ লাখ বর্গফুটের মতো জায়গা রয়েছে। নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে যুক্ত হবে আরও ২২ দশমিক ৫ লাখ বর্গফুট জায়গা। নতুন টার্মিনাল নির্মাণে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের ৫ হাজার
কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকে। বাকি অর্থ দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। আর জাপানের মিতসুবিশি, ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসং একটি কনসোর্টিয়াম হিসেবে
নির্মাণকাজটি করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরের বর্তমান যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি হবে। কার্গোর ধারণক্ষমতা দুই লাখ টন থেকে বেড়ে হবে পাঁচ লাখ টনে। এর ফলে একক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরের মাধ্যমে নতুন টার্মিনালটির সব কর্মকা- পরিচালনা সম্ভব হবে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে থার্ড টার্মিনালের জন্য প্রথমে ১৩ হাজার ৬১০ দশমিক ৪৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে একটি পৃথক আমদানি-রপ্তানি কার্গো হাউস স্থাপন ও নতুন ভিভিআইপি টার্মিনাল প্রকল্প কাজের কিছু অংশ বর্ধিত করায় মোট প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা হয়। প্রকল্পের বাড়তি বরাদ্দের প্রস্তাব গত ১০ ডিসেম্বরের একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী চার বছরের মধ্যে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন (প্রাইভেট) লিমিটেড সিঙ্গাপুরের রোহানী বাহারিন তিন তলাবিশিষ্ট তৃতীয় টার্মিনালের নকশা করেছেন।
থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে সিভিল এভিয়েশন বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করছে। অনেক দেশে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এটি হয়ে থাকে। জাপানের মিতসুবিশি কোম্পানি তৃতীয় টার্মিনাল কাজের সাথে যুক্ত। তারা একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এখন আলোচনা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত।
Leave a Reply