1. paribahanjagot@gmail.com : pjeditor :
  2. jadusoftbd@gmail.com : webadmin :
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
র‌য়্যাল এনফিল্ডের ৩৫০ সিসির নতুন ৪ বাইকের যত ফিচার ঝালকাঠি থেকে ১১ রুটে বাস চলাচল বন্ধ বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ১০ দেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হলেন স্টার লাইনের হাজী আলাউদ্দিন তরুণরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামুক আবার পেট্রোনাস লুব্রিক্যান্টস বিক্রি করবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় সব ভিসা সেন্টার বন্ধ মন্ত্রী এমপিদের দেশত্যাগের হিড়িক : নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন অনেকেই বাস ড্রাইভার নিকোলাস মাদুরো আবারও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ইউএস-বাংলার দশম বর্ষপূর্তি : ২৪ এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে বিদেশে ২০ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা

পোড়াতেল থেকে ডিজেল উৎপাদনের বিরল সাফল্য

অয়েল গ্যাস এন্ড লুব্রিকেন্ট রির্পোটার
  • আপডেট : শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০

হোটেল-রেস্তোরাঁর পোড়া ভোজ্য তেল এখন একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যার মধ্যেই এক দল উদ্যোমী তরুণ খুঁজে পেয়েছে অপার সম্ভাবনা। পোড়া তেলকে প্রক্রিয়াজাত করে তারা তৈরি করছে বায়োডিজেল, যা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন উদ্ভাবন। কালো রঙের পোড়া তেল থেকে এই বায়োডিজেল পাওয়ায় এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ বা ‘কালো সোনা’। এই কালো সোনা দিয়ে ঘুরছে গাড়ির চাকা, যা বাজারের প্রচলিত ডিজেলের চেয়ে গুণেমানে অনেক উৎকৃষ্ট। শুধু তাই নয়, বায়োডিজেলের পাশাপাশি পোড়া তেল থেকে গ্লিসারিনও তৈরি করা হচ্ছে। ফেলনা পোড়া তেলের সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করা পাঁচ তরুণের দলনেতা আব্দুল্লাহ আল হামিদ। হামিদ ও তার টিম শুধু সম্ভাবনা দেখিয়েছে তা নয়, এই পোড়া তেল প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বায়োডিজেল তৈরি করে একদিকে যেমন পরিবেশের উপকার করছে, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যেরও উপকার করছে তারা। কারণ পোড়া তেলের উৎস হোটেল-রেস্তোরাঁ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের অধিকাংশই গোপনে বিক্রি করে দেয় চানাচুর, চিপসসহ বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে। এসব খাদ্য খেয়ে ক্যানসারসহ নানারকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কারণ এই পোড়া তেলে থাকে উচ্চমাত্রার ট্রান্সফ্যাট, যা মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর কিছু প্রতিষ্ঠান পোড়া তেল ড্রেন ও নদী-নালায় ফেলে দেয়, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। হামিদ ও তার দল এই ফেলনা পোড়া তেল সংগ্রহ করে তৈরি করছে ‘কালো সোনা’।
সম্প্রতি কথা হয় আব্দুল্লাহ আল হামিদের। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন, ‘বায়োটেক এনার্জি লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হামিদ নিজেই। পোড়া তেল থেকে বায়োডিজেল তৈরির ভাবনাটা এলো কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় পোড়া তেল থেকে বায়োডিজেল তৈরি হয়- সে গল্প শোনালেন হামিদ।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করা হামিদের কাছে এই সমস্যাটির তথ্য আসে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছ থেকে। ওই শিক্ষক জানান, রোজার মাসে হোটেলের ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকেই। এর জন্য দায়ী পোড়া ভোজ্য তেল। তখন তার মাথায় আসে কীভাবে পোড়া তেলের এই সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করা যায়। সে সময় পরিচয় হয় বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘এক্সেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) প্রোগ্রাম’ নামে প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তিনি তার প্রকল্পের মডিউল ও পরিকল্পনা জুরি বোর্ডে উপস্থাপন করলে সেটি জুরি বোর্ড সদস্যদের পছন্দ হয়। পরে এ টু আই প্রকল্প থেকে ১৯ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয় কারখানা স্থাপনের জন্য। রাজধানীর ডেমরায় স্থাপন করা হয়েছে বায়োডিজেল তৈরির কারখানাটি। সেখান থেকেই শুরু আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি হামিদদের। তবে তাদের চলার পথ মসৃণ ছিল না। পদে পদে হোঁচট খেতে হয়েছে।
বায়োডিজেল উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি বেশ কিছু বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে পোড়া তেল সংগ্রহ করা হয়। এসব জায়গা থেকে ১৫-২০ টাকা কেজি দরে এগুলো কেনা হয়। সেগুলো কারখানায় এনে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বায়োডিজেল ও গ্লিসারিন তৈরি করা হচ্ছে। শুরুতে মাসে মাত্র ৩০-৫০ লিটার বায়োডিজেল সরবরাহ করেছি। এখন প্রতি মাসে দুবারে ৯ টন করে বায়োডিজেল তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। পেট্রল পাম্পের ট্রাক-লরিতে কারখানা থেকে বায়োডিজেল দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও কাঁচামালের সঙ্কট রয়েছে। কাঁচামাল পেলে আরও বেশি করে বায়োডিজেল উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করেন আবদুল্লাহ হামিদ।
তিনি জানান, ২০ টাকায় পোড়া তেল কিনে ৬০ টাকায় বায়োডিজেল বিক্রি করা হচ্ছে। যারা চোরাইভাবে বেশি দামে পোড়া তেল কিনছে তাদের মতো বেশি দামে পোড়া তেল কিনতে পারি না। বার্গার কিংয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা এখনও পোড়া তেল নিতে পারছি না। আমরা আনতে গেলে বলে, তারা নাকি ফেলে দেয়। আসলে তারা বেশি দামে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। অনেক বড় প্রতিষ্ঠানই এটা করছে। ওই দুষ্টুচক্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা লিটারে পোড়া তেলগুলো কিনে চানাচুর, চিপসসহ নানা রকম খাদ্যদ্রব্য তৈরি করছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই গ্রুপটি আমাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেএফসি প্রথমে আমাদের পাত্তা দেয়নি, কিন্তু তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এখন কেএফসি আমাদের পোড়া তেল সরবরাহ করছে। কেএফসির প্রত্যেকটি ব্রাঞ্চ থেকে আমরা এখন পোড়া তেল সংগ্রহ করছি।
বায়োডিজেল তৈরিতে ৯ টন পোড়া তেলের সঙ্গে ২০ শতাংশ নানারকম কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় প্রক্রিয়াজাতের জন্য। সে হিসাবে ৯ টন পোড়া তেল থেকে ৯৫ শতাংশই বায়োডিজেল তৈরি হচ্ছে। বাকি ৫ শতাংশ থেকে হচ্ছে গ্লিসারিন। বাজারে যত পোড়া তেল আছে, তার মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ সংগ্রহ করতে পারছেন হামিদরা। তবে তাদের লক্ষ্য প্রতিদিন বাজার থেকে ১ টন করে পোড়া তেল সংগ্রহ করা। কারণ, শিল্প এবং হোটেল মিলে দেশে প্রতিদিনই ১ টনের বেশি পোড়া তেল তৈরি হচ্ছে।
হামিদ জানান, আমাদের ১০ থেকে ২০ শতাংশ লাভ থাকছে বায়োডিজেল বিক্রি করে। আমরা বায়োডিজেল বিক্রি করছি ৬০ টাকা লিটার দরে। পাম্পে সাধারণ যে ডিজেল বিক্রি হয় তার মূল্য প্রতিলিটর ৬৫ টাকা। কিন্তু ওই ডিজেলের চেয়ে আমাদের বায়োডিজেলের মান অনেক ভালো। আমরা ডিলারকে ৬০ টাকা দরে দিচ্ছি, ডিলার কিন্তু ৬৫ টাকাতেই বিক্রি করছেন। বায়োডিজেল তৈরি করতে প্রধান মেশিন হচ্ছে রিয়েক্টর। এটি তারা নিজেরাই তৈরি করেছেন। এটি আরও বড় আকারে তৈরি করতে ভারত ও চীনের এক্সপার্টদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। হামিদ জানান, আগামী দেড় থেকে দুবছরের মধ্যে প্রতিদিন যাতে ১০ টন বায়োডিজেল তৈরি করতে পারি আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবদুল হালিম এ বিষয়ে জানান, কালো পোড়া তেল থেকে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বায়োডিজেল উৎপাদন করায় একে আমরা এটিকে ব্ল্যাক গোল্ড বা কালো সোনা হিসেবে আখ্যায়িত করছি। পাটকে যেমন বলা হয় সোনালি আঁশ, চিংড়িকে বলা হয় সাদা সোনা বা হোয়াইট গোল্ড, তেমনি এর নাম দেওয়া হয়েছে কালো সোনা। তিনি বলেন, হামিদ ও তার টিম যা করছে তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তারা পরিবেশ ও মানব শরীরের জন্য অনেক উপকার করছেন। এজন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আছে। তারা যাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পোড়া তেল পান তার জন্য আমরা কথা বলছি ওইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
এদিকে আবদুল্লাহ হামিদ আরও জানান, তার কারখানায় এখন তিনিসহ পাঁচজন কাজ করছেন। তিনি জানান, আমাদের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য এ প্রকল্পকে কীভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, কীভাবে আরও বড় হওয়া যায় এবং আগামী দেড়-দুবছরের মধ্যে কীভাবে আমরা প্রতিদিন ১০ টন বায়োডিজেল উৎপাদন করতে পারি। এ ছাড়া আগামী ৫ বছরের মধ্যে প্রতিদিন ৫০ টন বায়োডিজেল উৎপাদন করতে চাই। সামনে আমাদের আপাতত এই দুবছর ও পাঁচ বছরের দুটি প্ল্যান রয়েছে। এর জন্য অবশ্য বড় বিনিয়োগের দরকার হবে। সেজন্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি, যাতে ঋণ পেতে পারি। আমরা যেহেতু পরিবেশের উপকার করছি, সেহেতু আমরা গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ের প্রতি আগ্রহী বেশি। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক, এডিবির মতো কোনো দাতা সংস্থার কাছ থেকেও আমরা সহজশর্তে ঋণ নিতে পারি। করোনা না এলে হয়তো আমরা এতদিন ঋণ পেয়ে যেতাম।
হামিদ জানান, বায়োডিজেলের পাশাপাশি পোড়া তেল দিয়ে আমরা গ্লিসারিনও তৈরি করছি। ডেমরার একটি সাবান তৈরির কারখানা কর্তৃপক্ষ গ্লিসারিন নিচ্ছে। যদিও এখন এটি খুবই অল্প পরিমাণে হচ্ছে। তবে আগামীতে গ্লিসারিন নিয়েও আমাদের বড় পরিকল্পনা রয়েছে। এখন খুব ভালোমানের গ্লিসারিন তৈরি করতে পারছি না, তাই এগুলো এখন প্রতিলিটার ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছি। অথচ মার্কেটে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দাম রয়েছে ভালো গ্লিসারিনের। এখন মাসে ১ টনের মতো গ্লিসারিন তৈরি করতে পারছি আমরা। আমরা এখন ডেমরায় ভাড়া করা জায়গায় কারখানা চালাচ্ছি। তবে ময়মনসিংহের ভালুকায় আমরা বড় আকারে স্থায়ী কারখানা স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমাদের চাওয়া, সিটি করপোরেশনের মধ্যে কোথাও। কারণ পোড়া তেল বেশি পাওয়া যায় সিটি করপোরেশন এলাকায়। এজন্য আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায়ও জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করছি। সে লক্ষ্যে মেয়র আইভী রহমানের সঙ্গে ইতোমধ্যেই একটি মিটিং করেছি। আমরা এখন একটি বড় কারখানা করার স্বপ্ন দেখছি। আশা করি, সে স্বপ্নপূরণ হবে।
হামিদ পরিবার থেকেও ভালো সাপোর্ট পাচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, যেহেতু আমরা ব্যবসায় লাভ করছি, তাই সবার সাপোর্ট আছে। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বায়োটেক এনার্জি লিমিটেড’। আমি এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া আমার সঙ্গে রিয়াদ, তানভীর, রাজু, জাহিদ রয়েছে। এর মধ্যে রিয়াদ ও তানভীরের শেয়ার আছে। বাকি দুজন কর্মী। আমরা একটি সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করেছি।
এ বিষয়ে এ টু আই প্রকল্পের ল্যাব কো-অর্ডিনেটর মো. লুৎফর রহমান হামিদ ও তার দলের উদ্ভাবনটির বিভিন্ন ভালোদিক রয়েছে। তারা সমাজের একটি সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করেছেন। আবার পরিবেশ ও মানব শরীরের উপকার করছেন। তাদের উদ্ভাবনটি ভালো লেগেছে আমাদের। এজন্য তাদের আর্থিক সহযোগিতাসহ সবরকম সপোর্ট দিচ্ছে এ টু আই। উৎস : সময়ের আলো ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© 2020, All rights reserved By www.paribahanjagot.com
Developed By: JADU SOFT