পর্যটন বিকাশে আবারও আসছে ছাদখোলা বিশেষ বাস সার্ভিস। দেশের পাচটি বিভাগীয় শহরের জন্য এসব বাস আনা হচ্ছে। মূলত দেশবিদেশী পর্যটকদের জন্যই এই সেবা দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে আনা হবে ছয়টি বাস। যা দিয়ে দেশের আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি বলেছেন- বর্তমানে পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের বিশেষ বাস সার্ভিস রয়েছে। আমাদের দেশেও এক সময় ছিল। এখন আবার এই বিশেষ সার্ভিস চালুর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ইউরোপ-আমেরিকার মতো ছাদখোলা বাসে ঘুরতে পারবেন দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে ছয়টি ট্যুরিস্ট বাস বা কোচ আনছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। এর মধ্যে দুটি বাস চলবে ঢাকা বিভাগের আকর্ষণীয় বিভিন্ন পর্যটন এলাকায়। দুটি বাস চলবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পর্যটন এলাকায়। বাকি দুটি বাস চলবে সিলেট বিভাগের চারটি জেলায়। এসব বাস দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হলে আরও বাস আনা হবে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দুনিয়ার সব উন্নত দেশ এমনকি নেপালের মতো ছোট দেশেও ট্যুরিস্টদের জন্য বিশেষায়িত বাস সার্ভিস চালু রয়েছে যা দিয়ে দেশের আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থানসমূহ ঘুরে ফিরে দেখা যায়। শহরের ভেতরে বাইরে এ সার্ভিস চলাচল করে। ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরেই এ ধরনের বাসের যথেষ্ট চাহিদা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। এমন বাস্তবতা থেকেই এবার দেশের পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এবারই প্রথম অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট বাস কিনতে যাচ্ছে সরকার। এ ছয়টি বাস কিনতে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতিটি বাসের মূল্য হতে পারে সোয়া তিন কোটি টাকার মতো। জানা গেছে, দৃষ্টিনন্দন এ সব দ্বিতল বাসের ছাদ থাকবে খোলা। থাকবে দীর্ঘসময় চলাচলের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। শুধু ওয়াইফাই নয়- থাকবে সীমিতাকারে টয়লেট সুবিধাও। আসন থাকবে ৪০ থেকে ৪৫ জনের। পর্যটকদের জন্য ছাদখোলা বাস কেনার প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় এটি পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ ক্ষমতাবলে অনুমোদন করতে পারবেন।
টোয়াব জানিয়েছে, পর্যটন কর্পোরেশননের বাস কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকলেও ইতোমধ্যে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এ ধরনের বাস সার্ভিস চালু করে দিয়েছে। যা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। গত জানুয়ারিতে একটি ৪৮ আসনের ছাদখোলা এই বাসটি কক্সবাজার সৈকত এলাকায় চালু করা হয়েছে। এটি প্রতিদিন সকাল ৯টায় কক্সবাজারের কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে টেকনাফ পর্যন্ত চলাচল করছে। এছাড়া বান্দরবানেও চালু করা হয়েছে একই ধরনের বিশেষ বাস সার্ভিস। এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বান্দরবান সদরের স্বনামধন্য হোটেল হিলভিউ-এটি চালু করে। এই সার্ভিসের মাধ্যমে এখন থেকে বান্দরবান ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ফিতা কেটে হোটেল হিলভিউ-এর ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন করেন। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন- পর্যটন জেলা বান্দরবান আজ থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। বান্দরবানে এখন থেকে পর্যটকরা এসি ও নন এসি দুইটি বাসের মাধ্যমে জেলার সব বিনোদন কেন্দ্রে ভ্রমণ করতে পারবেন। এই বাস ভ্রমণে পর্যটকরা যেমন নিরাপত্তা পাবে- তেমনি পাবে স্বল্পমূল্যে ভ্রমণের সুযোগ। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার জেরিন আখতার, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ, পৌরমেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী, বান্দরবান পরিবহন মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আবদুল কুদ্দুছ, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পর্যটন কর্পোরেশন চেয়ারম্যান রামচন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহরে এ ধরনের বাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারপর পর্যায়ক্রমে জেলাগুলোতে চলাচল উপযোগী বাস চালুর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এগুলো নিয়ে আরও কাজ চলছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে পর্যটকরা নিরাপদে চলাচল করতে পারেন সে সুবিধাও থাকবে এ সব বাসে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে বর্তমানে পর্যটনের নিজস্ব ৪৫টি হোটেল মোটেল রয়েছে। সেগুলোতে বাস সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়েও কাজ চলছে। পরিকল্পনা রয়েছে অন্যান্য সেবামূলক উদ্যোগ নেয়া। এদিকে পর্যটন বাসের চলাচল সম্পর্কে পর্যটন কর্পোরেশন জানিয়েছে, ট্যুরিস্ট বাস চলাচল করবে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন মেনে। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা সকালে নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বাসে উঠবেন। সারাদিন বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকা ঘুরে আবার আগের জায়গায় নেমে যাবেন। তারা এজন্য নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করবেন। বাসগুলো রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাতীয় সংসদ ভবন, সাভার স্মৃতিসৌধ, সোনারগাঁয়ের পানাম নগর, কারুপল্লীসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরবে। একইভাবে কক্সবাজার জেলায় কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে টেকনাফসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাবে এসব বাস। সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় চাবাগান, হাওড়, জমিদারবাড়ি, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে পর্যটকদের। এ ছাড়াও দেশের অন্য দর্শনীয় এলাকাতেও এসব বাস চলাচল করবে। তবে বর্ষাকালে এসব বাসের ছাদ খোলা রাখা যাবে কিনা কিংবা সে সময় কিভাবে তা চালু রাখা হবে- সেগুলো নিয়েও নেতিবাচক মতামত থাকলেও এ সার্ভিস কখনই বন্ধ রাখা হবেনা বিকল্প ব্যবস্থায় হলেও এটা চালু রাখা হবে।
Leave a Reply