নারায়ণগঞ্জের যুবরাজ মার্কেট অপসারণে মো. জাকির ওরফে জাকির শাহ পীরকে নোটিস দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। মর্কেটটি শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বন্দর থানার গঙ্গাকূল ‘ম’ খ- মৌজায় নদীর জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। রবিবার যুগ্ম-পরিচালক (বন্দর) শেখ মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে যুবরাজ মার্কেটের মালিক মো. জাকির ওরফে পীর জাকির শাহ বরাবর ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নৌপুলিশ সুপার, বন্দরের ইউএনও, বন্দরের এসিল্যান্ড, বন্দরের ওসি, নৌপুলিশের ওসিকেও দেওয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নদী ভরাট এবং অবৈধ দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাই কোর্টে রিট করে। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত দখলদার উচ্ছেদসহ নদীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, তীরে স্থায়ী কাঠামো অপসারণ এবং বালু বা অন্য কোনোভাবে ভরাট বন্ধ রাখার আদেশ দেয়। এ ছাড়া হাই কোর্টের পৃথক একটি রিটের আদেশেও নদী ভরাট নিষিদ্ধ করে ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে বিআইডব্লিউটিএ থেকে ওই এলাকায় লাল নিশান ও লাল মার্কা দেওয়া হয়।
‘নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্দর থানার গঙ্গাকূল ‘ম’ খ- মৌজায় সাম্প্রতিক সময়ে আপনি (পীর জাকির শাহ) শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় লাল নিশান ও মার্কা অতিক্রম করে অবৈধ এবং বেআইনিভাবে যুবরাজ মার্কেট নামে একটি পাকা মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এর নির্মাণকাজ শুরুর সময় আপনাকে সরাসরি হাই কোর্টের আদেশটি অবহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য আপনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তারপর বিভিন্ন সময় বারণ করা সত্ত্বেও আপনি নির্মাণ সম্পন্ন করেন। আপনার এরূপ কার্যক্রম সরকারি আদেশ লঙ্ঘনসহ সরাসরি হাই কোর্টের আদেশ বরখেলাপ। এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলার বন্দর থানার গঙ্গাকূল ‘ম’ খ- মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় নির্মিত অবৈধ যুবরাজ মার্কেট নামীয় পাকা স্থাপনাটি পত্র জারির সাত দিনের মধ্যে নিজ খরচে সম্পূর্ণ অপসারণ করে তীরভূমি ও নদী আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে এবং এর সমুদয় ব্যয় আপনার কাছ থেকে আদায় করা হবে। একই সঙ্গে হাই কোর্টের আদেশ অবমাননায় আপনার বিরুদ্ধে আদালত অবমামনার অভিযোগ দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ১০ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বন্দর ঘাট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই সময়ে বন্দরের গঙ্গাকূল মৌজায় পীর জাকির শাহের নির্মাণাধীন যুবরাজ মার্কেটের শতাধিক দোকানঘর উচ্ছেদ করতে গেলে বিআইডব্লিউটিএর অভিযানে বাধা প্রদান করে দখলদাররা। এরপর ১৫ নভেম্বর বন্দর ১ নম্বর খেয়াঘাটের ময়মনসিংহপট্টি এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বিশাল সমাবেশ করে বিআইডব্লিউটিএর প্রতি হুঁশিয়ারি দেন পীর জাকির শাহ। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন তার কাছের লোক বলেও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের প্রতি সাবধানবাণী উচ্চারণ করেন তিনি। অথচ এই পীর জাকির শাহর বিরুদ্ধে শুধু বিআইডব্লিউটিএর জমিই নয়, রেলওয়ের পুকুরও দখল-ভরাটের অভিযোগ রয়েছে।
Leave a Reply